রাজধানীর পান্থপথ মোড় সংলগ্ন গ্রিন রোডের মডার্ন কনসেপ্ট অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেডের বিল্ডিং ১৪৭/৪/এ, গ্রিন রোডের এমসিটি-গ্রিন অ্যাপার্টমেন্টের আট তলায় সি/৭ ফ্ল্যাটে ১১ বছর ধরে বসবাস করা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের ধূম্রজাল। কেউ কেউ বলছেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান আর কেউ নন, তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। নাম পরিবর্তন করে এবং বেশভূষা পাল্টে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে রাজধানীতেই তিনি বসবাস করেছেন। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজার রায় রয়েছে। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলায় তার বিরুদ্ধে সাত বছরের কারাদণ্ড রয়েছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর এভার কেয়ার হসপিটালে মাহমুদুর রহমানের মৃত্যুর পর তার লাশ দাফন করার জন্য হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী সাভারের বিরুলিয়ার একটি মাদ্রাসায় নিয়ে যান। এক্ষেত্রে গোপনীয়তার বিষয়ে সামিরা চৌধুরী গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘১৪ বছর যে মানুষটি আত্মগোপনে ছিলেন, তার খবর প্রকাশ করা সহজ ছিল না। তবে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানই আমার বাবা হারিছ চৌধুরী। ডিএনএ টেস্ট করলেই এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
২০১৮ সালে হারিছ চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি হারিছ চৌধুরী ও তার ছবি যুক্ত করে লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আশিক উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ‘প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে যুক্তরাজ্যে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। তার দাফন যুক্তরাজ্যেই হয়েছে।’
আশিক উদ্দিন চৌধুরীর এই দাবির চার দিন পর একটি গণমাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর লন্ডন প্রবাসী মেয়ে সামিরা চৌধুরী এক সাক্ষাত্কারে বলেন, তার বাবা গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। ঢাকা থেকে দূরে সাভারের বিরুলিয়ায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা নামে একটি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাকে দাফন করা হয়েছে।’ এ খবর প্রকাশের পর গোয়েন্দা সংস্হাগুলো তদন্তে নামে।
পাসপোর্ট ও এনআইডি অনুযায়ী নাম মাহমুদুর রহমান। এতে ঠিকানা রয়েছে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার। বাবার নাম আবদুল হাফিজ। ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আগারগাঁও অফিস থেকে তার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্টে দেওয়া ছবিতে দেখা যায়, এ সময় তার চেহারায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। সাদা লম্বা দাড়ি। চুলের রঙ একদম সাদা। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। তার এনআইডি নম্বর হচ্ছে ১৯৫৮৩৩৯৫০৭। পাম্হপথ মোড় সংলগ্ন গ্রিন রোডের অ্যাপার্টমেন্টে দীর্ঘ ১১ বছর ভাড়া থাকতেন মাহমুদুর রহমান। নিজের পরিচয় দিতেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।
এমসিটি-গ্রিন অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি স্বাভাবিক ও সাধারণ জীবনযাপন করতেন। বাসার বাইরে সন্ধ্যা বা বিকালে হাঁটাহাঁটির জন্য বের হতেন। বাসার বাজার নিজেই করতেন। মাঝেমধ্যে ওষুধ আনতে দিতেন। আমি সামনের দোকান থেকে এনে দিতাম। বাসায় একজন বুয়া ছিলেন। পরে একজন কাজের ছেলেকে বাসায় রাখেন। বাসার ভাড়া নিতে যাওয়ার সময় দেখতাম তিনি কোরআন শরিফ পড়ছেন। নামাজ পড়তেন। তার সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য খুব একটা জানতাম না। শুনেছি তার স্ত্রী ও সন্তানরা থাকেন লন্ডনে। কেউ কোনো দিন আসেনি। একদিন ভোর রাতে কেউ একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শুনেছি হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়েছে।
সাভারের বিরুলিয়ার জামিয়া খাতামুন্নাবিয়্যীন ঢাকা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাদ্রাসা প্রাঙ্গণের কবরস্থানের সারিতে ৩ নম্বর কবরটিই মাহমুদুর রহমান নামধারী হারিছ চৌধুরীর। মাদ্রাসায় ৫ লাখ টাকা অনুদানের বিনিময়ে তাকে এখানে দাফন করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর বাদ আছর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শায়খুল হাদিস মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমী জানাজা পড়ান।’
মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান আরও গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কবর দেওয়ার সিস্টেম হলো, এক সারি কবর রাখা আছে, যেখানে ৫ লাখ টাকা অনুদান এবং নামাজি হওয়ার শর্ত সাপেক্ষে কবর দেওয়ার বিধান রয়েছে।’
সিলেটসানডটকম/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net