ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন অবিলম্বে বন্ধ করার এবং সমস্ত রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের দাবিতে জাতিসঙ্ঘে এক প্রস্তাব পাস করা হয়েছে।
বুধবার জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে এই প্রস্তাব পাস করা হয়।
প্রস্তাবটির পক্ষে মোট ১৪১টি দেশ ভোট দেয়। অপরদিকে বিপক্ষে ভোট দেয় পাঁচটি দেশ। মোট ৩৫টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতিসঙ্ঘে এই প্রস্তাবটি এমন সময় পাস হলো, যখন একদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বোমাবর্ষণ করছে এবং দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর অবরোধ করে রেখেছে। অপরদিকে রুশ সামরিক সাঁজোয়া যানের একটি বিশাল বহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাইরে অবস্থান করছে।
শুধু বেলারুশ, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইরিত্রিয়া এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়।
অপরদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ ৩৫টি দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে।
তবে সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে কিছু বিস্ময়কর অবস্থান দেখা যায়।
রাশিয়ার মিত্র কিউবা ও নিকারাগুয়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। অপরদিকে শুক্রবারের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যা’ ভোট দিয়েছে।
যদিও কিউবা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, তা স্বত্বেও দেশটি রাষ্ট্রদূত পেদে্রা লূই কুয়েস্তা, এই সংকটের জন্য রাশিয়ার উদ্বেগকে উপেক্ষা করে দেশটির সীমান্তের দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনে আধুনিক অস্ত্র সরবরাহের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিপরীতে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব আইনত বাধ্যতামূলক কোনো বিষয় নয়। তবে আন্তর্জাতিক মতামত প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে এই ভোটের প্রভাব রয়েছে। বিশেষ জরুরি অধিবেশনের বিধান অনুসারে , একটি প্রস্তাবের জন্য ভোটদানকারী দেশগুলির দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় । যা অতি সহজেই অর্জিত হয়েছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশেষ অধিবেশনকে ঐতিহাসিক এবং ‘অভূতপূর্ব বৈশ্বিক ঐক্যের’ প্রদর্শন বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের একটি অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকার করে যে আমরা যদি পুতিনের রাশিয়ার বিরুদ্ধে না দাঁড়াই, তবে এটি বিশ্বে আরও বিশৃঙ্খলা এবং আগ্রাসন ঘটাবে।"
শুক্রবার রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের অনুরূপ একটি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর, ইউক্রেন এবং তার সমর্থকরা একটি জরুরি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে। যার ফলে সোমবার এ জরুরি অধিবেশন শুরু হয় । দুই দিনব্যাপী চলা এই আলোচনায় বিশ্বের প্রায় ১২০টি সদস্য রাষ্ট্র এ বিষয়ে সাধারণ বিতর্কে অংশ নেয়।
পাস হওয়া প্রস্তাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনকে তীব্রভাবে নিন্দা করা হয়। এই পদক্ষেপটি মস্কোর শক্তির ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করার এবং সমস্ত রুশ বাহিনীকে অবিলম্বে, সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি করে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ‘এমন মাত্রায় যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কয়েক দশক ধরে ইউরোপে তা দেখেনি এবং এই প্রজন্মকে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
প্রস্তাবে ‘সংঘাতের অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান’ জানানো হয় এবং ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, একতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমাবেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।’
একইসাথে ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের তার পারমাণবিক শক্তির প্রস্তুতি বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে’ নিন্দা করা হয় প্রস্তাবে।
ভোটের আগে, ইউক্রেনের জাতিসঙ্ঘের রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়্যাস সাধারণ সভাকে বলেছিলেন, ‘তারা ( রাশিয়া) ইউক্রেনের মাটিতে এসেছে, শুধু আমাদের কয়েকজনকে হত্যা করতে নয় ... তারা ইউক্রেনকে অস্তিত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে এসেছে।’
তিনি আরো বলেন যে ‘অপরাধগুলি এতটাই নির্মম যে বোঝা কঠিন।’
রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া তার বক্তব্যে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলি এই প্রস্তাবের ওপর সমর্থন পাওয়ার জন্য ‘সরাসরি এবং নিষ্ঠুর হুমকি’ দিয়ে ’অভূতপূর্ব চাপ’ প্রয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই দলিলটি আমাদের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করার অনুমতি দেবে না। বিপরীতে, এটি কিয়েভে উগ্রপন্থী এবং জাতীয়তাবাদীদের যে কোনো মূল্যে তাদের দেশের নীতি নির্ধারণ চালিয়ে যেতে উত্সাহিত করতে পারে।’
প্রস্তাবটি রাশিয়াকে পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অংশকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবটিতে ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই বেআইনি বল প্রয়োগে বেলারুশের জড়িত থাকার’ নিন্দা করা হয়।
ভোটের পরপরই জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সাধারণ পরিষদের বার্তা সরব এবং স্পষ্ট: ইউক্রেনে শত্রুতা বন্ধ করুন এখনই। অস্ত্র বিরতি করুন এখনই। সংলাপ এবং কূটনীতির দ্বার উন্মুক্ত করুন এখনই।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংঘাতের নৃশংস প্রভাবগুলি দেখতে সহজ ... এটি অনেক, আরো খারাপ হওয়ার হুমকি দেয়।’
ভোটদান থেকে চীনের বিরত থাকার ব্যাখ্যা করে, রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন পূর্ববর্তী জাতিসঙ্ঘের বৈঠকের চেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ ভাষা ব্যবহার করেছেন, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন’ উল্লেখ করে এবং যা উদ্ঘাটিত হচ্ছে তাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য এবং জাতিসঙ্ঘের সনদ অনুসারে সমস্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য বেইজিংয়ের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
ঝাং বলেন, ‘এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে স্থলভাগে পরিস্থিতি যতটা সম্ভব সহজ করা, এবং পরিস্থিতিকে বাড়তে পারে বা এমনকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া রোধ করা।’
সিলেটসানডটকম/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net