দুই দিনের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি ছিল, যুদ্ধ নয়, সামরিক অভিযান চালাবেন তিনি। ইউক্রেনের সামরিক ঘাঁটিগুলোই তার সেনাবাহিনীর লক্ষ্য। সে দেশের সাধারণ জনগনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
তবে বাস্তবেও তেমন ঘটেনি। মৃত্যু কম হলেও ধ্বংসলীলা চারদিকে। বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছেন পুতিনের সেনারা। ইউক্রেনের আকাশ ছেয়ে গিয়েছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানে। সড়কপথে হানা দিয়েছে গোলাবারুদ, রকেট বোঝাই ট্যাঙ্ক।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনেই পুতিন-সেনাদের হামলায় মাথার ছাদ হারিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। কিয়েভ থেকে চুহুইভ, খারকিভ থেকে মারিয়ুপুল। গোটা ইউক্রেন জুড়ে ধ্বংসলীলার হাহাকার।
বৃহস্পতিবার চুহুইভের বিস্তীর্ণ এলাকার আকাশ ঢাকা পড়েছিল কালো ধোঁয়ায়। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই খারকিভের অদূরে চুহুইভের ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে সে দেশের পূর্বাঞ্চলে ডনবাস, দক্ষিণের ক্রাইমিয়া, বন্দর-শহর ওডেসা ছাড়াও বেলারুশ সংলগ্ন উত্তর ইউক্রেন— ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়েছে তারা।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পশ্চিমেও হানা দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার সকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির দাবি, হামলায় এখনও পর্যন্ত ১৩৭ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন, আহত অন্তত ৩১৬।
আকাশপথে হামলার সময় ইউক্রেনের সেনাঘাঁটির পাশাপাশি উড়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িও। রাশিয়ার রকেটের হানায় মাথায় হাত পড়েছে চুহুইভের আম জনতার।
যুদ্ধবিমানের আক্রমণে খারকিভের অসংখ্য বাসিন্দার বাড়ি প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। রকেটহানায় কারও পড়ার ঘরে এসে পড়েছে কংক্রিটের আস্ত চাঁই। কারও বা শোওয়ার ঘর ঢেকেছে ধুলোয়।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউক্রেনের বাসিন্দারা ছুটতে শুরু করেছেন। মেট্রো, ট্রেন বা বাসস্টেশনগুলি ভিড়ে ভিড়াক্কার। কিভের মতো ব্যস্ত শহরেও একই ছবি। শহর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার হিড়িক পড়েছে।
যুদ্ধের প্রথম দিনেই মারিয়ুপুলের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে গিয়েছেন। তবে আতঙ্ক কাটেনি। শেল্টার হোম থেকে বেঁচে ফেরা যাবে তো?
রাশিয়ান রকেটের হানায় কিভের বহু বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার হামলার মাঝে একফাঁকে ঘরের বাইরে পা রেখেছেন অনেকে। দেখেছেন— চারপাশে লোহা, কংক্রিট আর কাচের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে।
মারিয়ুপুলে ইউক্রেনের সেনাঘাঁটির পাশাপাশি বহু বাসিন্দার ঘরবাড়ি-সহ অসংখ্য গাড়িও ভেঙেচুরে হয়ে গিয়েছে। বাড়ির বাইরে পার্ক করা গা়ড়িতে পড়েছে রকেট।
শুক্রবার সকাল থেকেই বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙেছে কিভের বাসিন্দাদের। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শহরে দু’টি বিস্ফোরণের জোরালো আওয়াজ শোনা গিয়েছে। এই যুদ্ধের মাঝে পরিজনদের খবরাখবর নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগও প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।
অনেকেই আবার শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ছুটেছেন বাস টার্মিনাসে। কিভ ছাড়তে চান বহু মায়েরা। সোয়েটার-মাফলার জড়িয়ে কোলের সন্তানকে জড়িয়ে তাঁরা দাঁড়িয়েছেন বাসের অপেক্ষায়।
যুদ্ধ কত দিন চলবে? এখনও তা জানা নেই। তবে যুদ্ধের মাঝে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেকের ভবিষ্যৎ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করার জন্য তড়িঘড়ি সুপারমার্কেটে জড়ো হয়েছেন অনেকে। ইউক্রেনের রাজধানী কিভে পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্লাস্টিকের বড় বড় বোতলে জল কিনতে শুরু করেছেন।
রাশিয়ার হানাকে নাৎসি জার্মানির হামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘কিভে ভয়ঙ্কর ভাবে রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়ানরা। শেষ বার আমাদের রাজধানীতে এ রকম হামলা হয়েছিল ১৯৪১ সালে, যখন নাৎসি জার্মানি আক্রমণ করেছিল।’ তবে তিনি আশাবাদী, ‘ইউক্রেন সেই অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করেছে। এ বারও তা-ই করবে।’
সিলেটসানডটকম/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net