ইউক্রেনে যুদ্ধ উত্তেজনা : বাংলাদেশিরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন

সিলেট সান ডেস্ক:: || ২০২২-০২-২৪ ০১:১৬:০২

image

 

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ উত্তেজনা ছড়িয়ে যাওয়ার পর ইউক্রেনে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন সেখান অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেয়ার পর যুদ্ধ ভীতির ছায়া পড়তে শুরু করেছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে। সেখানে স্থানীয় মানুষজনের চলাফেরা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ইউক্রেনে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেছেন বাংলাদেশিরা। পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বলেছেন, তাদের হিসাবে ইউক্রেনে এখন এক হাজার থেকে ১৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন। পূর্ব ইউক্রেনের যে অংশে সমস্যার তৈরি হয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা পুরো ইউক্রেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং ইস্টার্ন ইউক্রেনের যেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি আছেন, স্টুডেন্ট আছেন।

রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন বলছেন, যদিও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন কারণে ইউক্রেন ছাড়ার ব্যবহারিক নানা অসুবিধা আছে, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে ইউক্রেন ছাড়ার কথা ভাবছেন এবং ছাড়ছেনও। গতকাল থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সুযোগ থাকলে তারা যেন অন্য কোন জায়গায় চলে যান। খারকিভে থাকলে সাইরেন বাজতে শুরু করলে যেন তারা ভবনের নীচে থাকা বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নেন।


তিনি বলেন, যারা শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী হিসাবে এসেছেন, বা চাকরি করেন, তারা চাইছেন সেখানে থেকে যেতে। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে হয়তো তাদের সরে আসতে হবে। অনেকে এর মধ্যেই অন্যত্র সরে যাচ্ছেন। তবে ইউক্রেনে থাকা বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখনি বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান না বলে তিনি জানিয়েছেন। 'দুইটি গ্রুপের মাধ্যমে ইউক্রেনে থাকা পাঁচশোর বেশি বাংলাদেশির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের আমরা সহযোগিতার সবরকম আশ্বাস দিয়েছি। তারা পোল্যান্ডে আসলে এখানে সাময়িকভাবে থাকা বা আশ্রয়ের সব ব্যবস্থা করা হবে।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় পোল্যান্ড দূতাবাস থেকে সেখানকার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের বাসিন্দা খালেদা নাসরিন নীলিমা যিনি পেশায় এক জন চিকিৎসক। বাংলাদেশি এই চিকিৎসক জানান, খারকিভ শহরের অনেক বাসিন্দা গোপনে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তার সন্তান যে স্কুলে পড়ে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে। শহরের অবস্থা থমথমে, মানুষজনের চলাফেরা অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে তরুণ বয়সীদের একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। গাড়িতে, পথে আগের মতো মানুষের দেখা মেলে না। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দোকানপাট খোলা আছে, তবে খাবার, সবজির দাম এক সপ্তাহের মধ্যেই ২০/৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ডা. খালেদা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এই শহরে আছি। সোভিয়েত আমল থেকে শুরু করে ইউক্রেনের স্বাধীনতা, বর্তমান যুদ্ধাবস্থা-সবই তার চোখের সামনে দেখেছি। এতদিন ধরে যত্ন করে যে বাসা সাজিয়েছিলাম, এখন সেটা ছেড়ে যেতে হবে। আপাতত ওয়েস্টে, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে কিছুদিন থাকবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো ইউক্রেনেই থাকবো, বাংলাদেশে যাবো নাকি অন্য কোথাও যাবো।

 

তিনি বলেন, খুবই উদ্বেগে আছি, তাই অন্য শহরে চলে যাচ্ছি। আগামীকালই চলে যাবো। এই বাসায় বিশ বছর ধরে থাকি, একেবারেই যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আমি এখানে থাকা এখন একেবারেই নিরাপদ বোধ করছি না। যুদ্ধ না বাধলেও আমি হয় দেশে ফিরে যাবো, না হয় অন্য দেশে চলে যাবো। কারণ এখানে যেসব গভীর সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর আর সমাধান হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।

এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের অবস্থা অবশ্য খারকিভের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক রয়েছে। এই শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মাহবুব আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা আছে, তবে জীবনযাত্রা স্বাভাবিকই বলা চলে। কনসার্ট হচ্ছে, অফিস-আদালত, যানবাহন চলছে। কিন্তু সবার মধ্যেই রাশিয়া নিয়ে একটা আলোচনা আছে। তবে রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি যেসব শহরে বাংলাদেশিরা থাকেন, তারা বেশ উদ্বেগে রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, অনেকের সঙ্গেই আমার নিয়মিত কথা হচ্ছে, যোগাযোগ হচ্ছে। তারা একটু ভয়ে আছেন। তারা অনেকেই ডর্মে বা বাসা থাকছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে তারা হয়তো কিয়েভে চলে আসবেন বা পোল্যান্ডে চলে যাবেন।


 

সিলেটসানডটকম/এসএ

 

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net