একটি শিশু জন্মের পর পরই আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন না করেও সে তার মা ও পরিবারের কাছ থেকে টিকে থাকার জন্য অনেক কিছুই শিখে ফেলে। নানারুপ শব্দ বা কান্নার মাধ্যমে ক্ষুধার জানান দিয়ে থাকে।
পরিবারের ভালবাসা পেয়ে ইশারা ঈংগিতের মাধ্যমে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। দু’থেকে চার বছরের মধ্যেই তার মা, পরিবার, সমাজ থেকে মাতৃভাষার অনেক কথাই শিখে ফেলে প্রকাশ করতে শুরু করে। তার এ পরিপক্কতা কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিদ্যাপীঠের অক্ষর, শব্দ ও বাক্য শেখার আগেই হয়ে থাকে। এখানেই মাতৃভাষার মহিমা নিহিত।
পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষা রয়েছে। সকল ভাষারই বর্ণমালা নেই। আবার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষার বর্ণমালা থাকলেও অনুশীলনের অভাবে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটি ভাষাকে ভালভাবে টিকিয়ে রাখতে হলে সে ভাষায় কথা বলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুশীলন করা, বই লেখা, পত্র লেখা, সরকারি কাজে ব্যবহার করা জরুরী।
বিশ্বে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষা থাকলেও বহুমাত্রিক অনুশীলনের অভাবে তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মাতৃভাষা একটি জাতি বা গোষ্ঠীর অহংকার। এ অহংকারের জিনিসটি সহজে নষ্ট করতে দেয়া উচিত নয়।
যে ভাষা দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা ওই সমাজের সংস্কৃতির একটি অংশ। অথচ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সে দেশের ভাষার অনুশীলন ও স্থায়ীত্বের বিষয় জড়িত রয়েছে। অনুন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশে অভিবাসনের কারনে নিজ ভাষা বিলুপ্ত হতে পারে।
একজন মানুষের বহুভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। যত ভাষাই শিখুক না কেন তার নিজ ভাষা বা মাতৃভাষা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তার জন্য এটা হবে মা-মাটি-মাতৃভুমিকে ভুলে যাওয়ার সামিল।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়ায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বাংলা ভাষায় কথা বললে সব অঞ্চলের ছোট-বড় সকলেই বাংলা ভাষা বুঝতে পারে ।
যদিও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষা ওই অঞ্চলের মানুষের সং¯ৃ‹তির বৈশিষ্ট। যখন বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলের লোক নিজেদের মধ্যে সম্পূর্নরুপে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন তা অন্য অঞ্চলের লোকের জন্য বোধগম্য হয়ে উঠে না।
কিছু আঞ্চলিক ভাষার নিজস্ব অক্ষর থাকলেও অনুশীলন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের অভাবে তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তবে ঐ ভাষাকে ধরে রাখতে হলে সে ভাষায় কথা বলা ও লেখার অনুশীলন করা জরুরী।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে হলেও নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীর এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে। মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার ধার এত প্রখর যে, নিজের অজান্তেই কথাবার্তা বলার সময় তা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিজস্ব কৃষ্টি ও সাস্কৃতির সঠিকভাবে প্রকাশ মাতৃভাষা ছাড়া সম্ভব নয়।
অনেক ধ্বনি বা শব্দ আছে যা সুনির্দিষ্ট ভাষার সাথে তাল মিলিয়ে চলে। হারমোনিয়াম বা গিটারের সুরের কোন লিখিত বর্ণ, শব্দ বা বাক্য নেই। নিদিষ্ট বাক্য বা ভাষার সমান্তরালে এ সুর হয়ে থাকে। একবার কারও মেমোরিতে এ গানের সুর রপ্ত হলে, পরবর্তীতে ঐ সুর বাজানো হলে সে সহজেই অনুমান করতে পারে এগুলো কোন গানের সুর।
মানুষের সাথে উঠা-বসা করে এমন পশুপাখিও মানুষের ভাষা বুঝতে পারে। মানুষের কথা, মুখের শব্দ, হাত বা চোখের ইশারায় এ ধরনের পশু-পাখি সাড়া দেয়। আবার তাদের শব্দ বা ইশারার মাধ্যমে প্রকাশিত অভিব্যক্তিও মানুষ বুঝতে পারে।
লেখক, ডিআইজি, সিলেট রেঞ্জ।
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net