প্লাস্টিকের সুতায় ধরা পড়ল অভিনেত্রী শিমুর খুনি

সিলেট সান ডেস্ক :: || ২০২২-০১-১৮ ২১:১৮:২১

image
অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু (৪১) সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করতেন। তার নিখোঁজ থেকে লাশ উদ্ধার এবং হত্যায় 'জড়িতদের' গ্রেপ্তার পর্যন্ত ঘটনাও নাটকীয়। পুলিশ বলছে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল। লাশ গুমে তাকে সহায়তা করেন বাল্যবন্ধু এসএমওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ। কিন্তু লাশ উদ্ধারের এক দিন আগে এই নোবেলই নিখোঁজের জিডি করেছিলেন। অন্য স্বজনদের নিয়ে সন্ধান করছিলেন স্ত্রীর। তবে প্লাস্টিকের যে সুতা দিয়ে লাশের বস্তা সেলাই করেছিলেন, সেই সুতার বান্ডেল পড়ে ছিল নোবেলের গাড়িতে। লাশ ফেলে পানি দিয়ে গাড়ি পরিস্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর আলামতও চোখ এড়ায়নি পুলিশের। এসব আলামতে সহজে ধরা পড়েন নোবেল ও তার বন্ধু। গত সোমবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের আলীপুর সেতুর পাশে ঝোপ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিমুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পরিচয় না মিললেও আঙুলের ছাপ যাচাই করে রাতে জানা যায়, লাশটি অভিনেত্রী শিমুর। রাতেই রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ নোবেল ও ফরহাদকে আটক করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই নোবেল ও ফরহাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। গতকালই নোবেল ও ফরহাদকে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে নোবেল নিজেই স্ত্রীকে খুন করেছেন। তবে শিমুর পরিবার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করলেও তারা বলছে, খুনি কে- তা তারা জানেন না। শিমু-নোবেল দম্পতির সংসারে এমন কোনো ঝামেলা ছিল না, যা হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত যেতে পারে। শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বলেন, 'নোবেলের সঙ্গে আমার বোনের তেমন কোনো কলহ ছিল না। তাদের ১৮ বছরের সংসার। তারা লাভ ম্যারেজ করেছিল। আমার বোন সবকিছু শেয়ার করে আমার সঙ্গে। এক দিনও বলেনি, নোবেলের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়েছে।' যে কারণে হত্যা :ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার তার কার্যালয়ের সামনে শিমু হত্যা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামত আর নোবেলের কথায় সন্দেহ হয়। এরপর তাকে ও তার বন্ধু ফরহাদকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল স্বীকার করেন, তিনিই স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। হত্যার কারণ হিসেবে বলেন, তাদের দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক কলহ চলছিল। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবদুস ছালাম জানান, পুলিশ এখনই নোবেলের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না। তার ভাষ্য যাচাই করা হবে। গ্রিন রোডে নিজ বাসাতেই শ্বাসরোধে হত্যা :পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল জানিয়েছেন, শনিবার রাতে শিমুর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তা তীব্র আকার ধারণ করে। সকাল ৭টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। পরে বন্ধুকে ডেকে লাশটি বস্তায় ভরে গাড়িতে নিয়ে যান। তবে শিমুর বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, গ্রিন রোডের বাসায় নোবেল ও শিমু ছাড়াও তাদের দুই সন্তান থাকে। বাসার ভেতর খুন হলে তো তারা জানত। এ নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। ওসি আব্দুস ছালাম জানান, সন্তানদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নোবেল জানিয়েছেন, ওই সময় তারা ঘুমিয়ে ছিল। তারা ওঠার আগেই লাশ বের করে ফেলা হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, ময়নাতদন্তে শিমুর গলায় দাগ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রশি অথবা এই জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে শরীর থেকে ভিসেরা ও ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। লাশ গুমে সহায়তাকারী বন্ধু :শিমু হত্যায় গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ ফরহাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে না পারলেও পুলিশ বলছে, এই ফরহাদ নোবেলের বন্ধু। হত্যাকাণ্ডের পর সব কাজেই সে নোবেলকে সহায়তা করেছে। শিমুকে হত্যার পরই নোবেল ফরহাদকে ফোন দিয়েছিল। এরপর দু'জনে মিলে বস্তায় ভরে লাশটি গাড়িতে তোলে। ফরহাদই গাড়িটি চালিয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল জানিয়েছেন, শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের গাড়ির পেছনের আসনে লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। ফরহাদ জানান, সকালে প্রথমে তারা গাড়িতে শিমুর লাশ নিয়ে মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ ফেলার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা ফের বাসায় ফেরেন। রোববার সন্ধ্যায় আবার লাশ ফেলতে মোহাম্মদপুর ও বছিলা ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলীপুর ব্রিজের কাছে গিয়ে বস্তাটি ফেলে দেন। প্লাস্টিকের সুতার সূত্রে রহস্য উদ্ঘাটন :পুলিশ জানায়, শিমুর মরদেহে থাকা বস্তা দুটি প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা ছিল। সোমবার রাতে পরিচয় শনাক্তের পর পুলিশ গ্রিন রোডে শিমুর বাসায় গিয়ে স্বামী নোবেলের গাড়ি তল্লাশির সময় সেই প্লাস্টিকের সুতার বান্ডেল পায়। এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না, শিমুর খুনি কে? লাশ গুমের পর নোবেলের জিডি নাটক :নিহত শিমুর ছোট বোন ফাতিমা নিশা জানান, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জানতে পারেন, শিমুকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর নোবেলের কাছ থেকে জানতে পারেন, শিমু রোববার সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন। মাওয়ায় যাওয়ার কথা। তখন সবাই মিলে খুঁজতে থাকেন। সব স্বজনকে ফোন দেন। সব সময় নোবেল তাদের সঙ্গে ছিলেন। এর সবই যে নাটক, তা তখন বুঝতে পারেননি। শিমুর গ্রামে শোকের ছায়া :আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, নিহত শিমুর বাড়ি আমতলীর উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামে। শিমুর মা, ভাইবোনেরা ঢাকায় থাকলেও তার বাবা নুরুল ইসলাম রাঢ়ি গ্রামে থাকেন। মেয়ে হত্যার খবর পেয়ে তিনি এখনও কাঁদছেন। শিমুর মামাসহ তার স্বজনরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। চলচ্চিত্রে শিমুর সহকর্মীরা বলছেন, ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াতের 'বর্তমান' সিনেমার মধ্য দিয়ে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। এরপর তিনি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষী নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পরিচালকের ২৫টি চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশন নাটকও করেছেন। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় মহিলা পরিষদ :ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। একই সঙ্গে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে তারা। অভিনেত্রী শিমু হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে বিবৃতি দেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সিলেটসানডটকম/এমকেইউ

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net