বাবার মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি হোক সন্তান হিসেবে চাই না: হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা

সিলেট সান ডেস্ক: || ২০২২-০১-১৪ ২৩:৫৯:৩৯

image
এক সময়কার দাপুটে রাজনীতিবিদ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু ঢাকাতেই হয়েছে। গেল বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামীরা তানজীন চৌধুরী মুন্নু। তাকে ঢাকার কাছে একটি গোরস্থান দাফন করা হয়। কিছু নিকটজন এবং ওলামা-মাশায়েখ অনেকটা গোপনে করা এই জানাজায় শরিক হন। বাবার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হোক সেটা সন্তান হিসেবে আমার কাম্য হতে পারে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলাপকালে জানিয়েছেন মুন্নু। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী সম্প্রতি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে মৃত্যুর সংবাদটি সামনে আনন। তবে সরাসরি কিছু বলেননি । এরপর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। ফলে কয়েকদিন ধরে তার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। আমেরিকা প্রবাসী জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী মুন্নু জানান, তার বাবা ঢাকাতেই মারা গেছেন। এর আগে হারিছ চৌধুরীর অবস্থান নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন- কেউ কেউ বলতেন তিনি ইংল্যান্ডে, কেউ বলতেন আমেরিকায়, আবার কেউ বলতেন ইরানে। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন হারিছ চৌধুরী। দেশেই থেকেছেন। কখনো তাবলিগ জামাতের হয়ে দ্বীনের দাওয়াতে গেছেন, আবার কখনো করেছেন মসজিদে ইমামতি। মুশফিকুল ফজল আনসারী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে জানান, হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামীরা বলেছেন, শেষ গোসল, অন্তিমযাত্রা আর আতর গোলাপ ছিটিয়ে আন্তিম শয়ানে শুইয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন তিনিই। সামীরা বলেন, 'সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক গোরস্থানে দাদুর কবরের পাশে বাবাকে সামাহিত করার কথা। কিন্তু আশিক চাচা (আশিক চৌধুরী) সাহস করলেন না।' হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপনে থাকাকালে পরিবারের সঙ্গে খুব সামান্যই যোগাযোগ হয়েছে উল্লেখ করে সামীরা বলেন, 'বাবা চাইতেন, যা হয় তার ওপর দিয়ে যাক। সন্তান হিসেবে আমাদের, আত্নীয়-স্বজন, এমনকি তিনি যে রাজনীতি করতেন সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বও যাতে তার কারণে কোনো বিপদে না পড়ে সেজন্য কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। মাঝেমধ্যে তিনি ফোনে সবার খোঁজ নিতেন। সর্বশেষ তিনি যখন আমাকে কাছে চাইলেন তখন সব প্রায় শেষ।' সামীরা আরও বলেন, 'আমি কয়েক ঘণ্টার নোটিশে সব ছেড়েছুঁড়ে ২৭ আগস্ট ঢাকা পৌঁছাই। ততোক্ষণে বাবা লাইফ সাপোর্টে। করোনা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাঁচাতে পারলাম না বাবাকে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক মুহূর্ত আড়াল করতে চাইনি। সবসময় তার পাশে বসেছিলাম। ভয় আর শঙ্কা আমাদের সব তছনছ করে দিল। মাত্র কয়েক দিন আগে ছোট চাচা (সেলিম চৌধুরী) স্ট্রোক করে মারা গেলেন। তার আগে মারা গেলেন হাসনাত চাচা (হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই), হারালাম এক ফুপু ও চার ফুপাকে। এমন বিপর্যয় আর কোনো পরিবারে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।' হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে তার মেয়ে বলেন, 'এর সবটাই রাজনৈতিক। আমার বাবা হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন, সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তিনি জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার মতো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য লড়েছেন। তার সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গৌরববোধ করি।' তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, 'এসব অভিযোগ কোন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে আসেনি, বলেন! এগুলোর ভিত্তিও আমাদের কারো অজানা নয়। পারিবারিকভাবে চৌধুরী পরিবার অসচ্ছল নয়। জন্মের আগে থেকে ট্রলারের ব্যবসা আর ছোটবেলা থেকে আমাদের গাড়ির শো-রুম দেখে আসছি। ঢাকা এবং সিলেটে বৃটিশ আমল থেকে আমাদের পরিবার ঐতিহ্যমণ্ডিত। ক্ষমতায় থাকাকালে গুলশানে একটি বাড়ি সরকারি নিয়মানুযায়ী রাজউক থেকে কিনেছিলেন যা সরকার পরবর্তীতে বাতিল করে ফেরত নিয়েছে। আর কী এমন আছে! আমার দাদা সিও (সার্কেল) অফিসার ছিলেন, এমএলএ ইলেকশনও করেছেন। তার সব ছেলে-মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমার বাবা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমাদেরকেও সুশিক্ষিত করে গড়েছেন। আমি আইন পাশ করে বৃটিশ গভর্নমেন্টের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসেবে জুরিখে কাজ করছে।' হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তার মেয়ে বলেন, 'আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা ও ফুফু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সাথে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদ্রাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দিই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।' সিলেটডটকম /এফবি

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net