নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সিলেট সান ডেস্ক:: || ২০২১-১২-০৯ ০৬:১৪:৪৪

image


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহবান জানিয়ে বলেছেন, আইন নয়, মানসিকতার পরিবর্তনই নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারে।


তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক তা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন করেছি। কিন্তু, শুধু আইন করল্ইে এ সব বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য মানসিকতাও বদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে এবং বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস।’


শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন’ এবং ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।


তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিশ্বাসটা করতে হবে যে, নারীরা কেবল ভোগের বস্তু নয়, নারীরা সহযোদ্ধা। তাঁরা সহযোগী, সহযাত্রায় চলতে হবে, সমান অধিকার দিতে হবে-এটা হচ্ছে বাস্তবতা। সেভাবেই কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ শিক্ষায়-দীক্ষায় কর্মসংস্থানে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করতে পারছে বলেই তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে।


সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই আমাদের দেশের নারী সমাজকে জাগ্রত করতে হবে।


কেননা, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যেখানে নারী কাজেই তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটা জাতির পিতা যেমন মনে করতেন তেমনি বেগম রোকেয়াও তাঁর লেখনিতে বলে গেছেন।


নারীদের বেশি লেখাপড়া শিখিয়ে কী হবে তারাতো পরের ঘরে চলে যাবে-এ ধরণের মানসিকতা আমাদের সমাজে বিদ্যমান ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে কারণেই জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকার নারীদের অর্থনৈতিক সাবলম্বীতা নিশ্চিত করার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।


মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফহিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন।


প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
নারী শিক্ষায় কুমিল্লার অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় যশোরের অর্চনা বিশ্বাস, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় কুমিল্লার শামসুন্নাহার রহমান পরাণ (মরণোত্তর), সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা এবং পল্লী উন্নয়নে কুষ্টিয়ার গবেষক ড. সারিয়া সুলতানা এ বছরের বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন।


পদক প্রাপ্তদের প্রত্যেকে রেপ্লিকাসহ স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র এবং নগদ অর্থের চেক পেয়েছেন। পরে বিজয়ীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অধ্যাপক হাসিনা জাকারিয়া বেলা ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।


অনুষ্ঠানে আজকের দিনটি তাঁর কন্যা এবং বাংলাদেশের অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন উল্লেখ করে সকলের কাছে তাঁর জন্য দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।


তিনি বলেন, পুতুলের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই আজ অটিজম আক্রান্তরা সমাজের মূলধারার সঙ্গে মিশে যেতে পারছে, স্বীকৃতি পেয়েছে। অটিজম শিশুদের কোন মা-বাবাই লোক লজ্জার ভয়ে এখন আর লুকিয়ে রাখেন না। সেই মানসিকতারও পরিবর্তন এসেছে।

নারী শিক্ষা এবং নারীর স্বনির্ভরতার ওপর জাতির পিতা সব সময় গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ে তিনি সর্ব শ্রেনীর নারীর অধিকারের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের সমস্যা, দুঃখ-কষ্ট সমাধানের কথাও তিনি বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা লেখাপড়ার প্রতি সব সময় গুরুত্ব দিতেন এবং বলতেন, একটা মেয়ে যদি ১০ টাকা কামাই করে তার আঁচলে বেঁধে পরিবারে আসে তাহলে সেই পরিবারে মেয়েদের একটা মূল্য থাকে।’


শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েরা উপার্জন করলে তাদের যে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা আসবে সে কথাই জাতির পিতা বলে গেছেন এবং যে কারণে নারী শিক্ষা অবৈতনিক করে দেন তিনি। কারণ, তিনি মনে করতেন শিক্ষাই নারী মুক্তির একমাত্র পথ।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ করে দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক বাধ্যতামূলক করেছি। এই সিদ্ধান্তের পর অনেক বাবা-মা মেয়েদের আর বাধা দেয়নি। অন্তত মেয়ে যে একটা চাকরি পাবে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তা ছাড়া কমিনিটি ক্লিনিকে মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচেছ। সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা ডিজিটাল সেন্টার গুলোতে উদ্যোক্তা দু’জনের একজন নারী হতে হবে। আমরা যে বিনা মূল্যে গৃহহীণকে ঘর দিচ্ছি সেখানেও নারী-পুরুষ দু’জনের নামে মালিকানা থাকলেও সমস্যার সৃষ্টি হলে মালিকানা নারীর নামেই বহাল থাকবে। পাশাপাশি নারী উদোক্তাদের কম সুদে ঋণও দেয়া হচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয়, নারীকে তার কাজের স্বীকৃতি দিতে আমরা এ বছর থেকে জাতীয় পর্যায়ের সম্মাননা ’বঙ্গমাতা পদক’ প্রবর্তন করেছি। সামাজিক অচলায়তন ভেঙে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু বাধা আসে, আসবে। সেই বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।


এ প্রসঙ্গে তিনি বেগম রোকেয়া’র অপর একটি লেখনির উদ্ধৃতি তুলে ধরেন।


বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, ‘আমরা সমাজের অদ্ধাঙ্গ হইয়া পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরুপে?’


প্রবল বাধার মুখেও দেশে প্রমিলা ফুটবল চালুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলায় মেয়েদের তো অংশ গ্রহণই করতে দিত না। যাই হোক দ্বিতীয় বার যখন সরকারে আসলাম, অন্যভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
তিনি সে সময়ে স্কুল পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন এবং প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল দল গঠনের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই এ জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার উদ্যোগও তুলে ধরেন।


তিনি বলেন, এভাবে ছোট বেলা থেকে শুরু করায় এখন আর সেই বাধা নেই। অর্থাৎ অচলায়তন ভেঙে একবার এগিয়ে যেতে পারলে আর কোন বাধা আসবে না।


আমাদের ধর্মে নারীর অধিকার প্রদানের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে তো মেয়েদের অধিকার দেওয়াই আছে। সেখানেইতো সম অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশে কিছু এ ধরনের বাধা আসে, আসবে। সেই বাধা আমাদের অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।


সরকার প্রধান বলেন, পুরুষ শাসিত সমাজ আমরা বলি। কিন্তু মেয়েদের ছাড়া পুরুষরা কী পথ চলতে পারে? পারে না। মায়ের পেটে জন্ম নিতে হবে, বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখে, বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকে, বৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যা সন্তানই বেশি দেখে, সেই যত্ন নেয় বেশি, এটাও তাদের মনে রাখতে হবে।


সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে নারীদের দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমি মনে করি অনেকটাই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।


তাঁর সরকারই আদালতের বিচারপতি থেকে শুরু বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারী অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যেয়ে আমাদের মেয়েরা কাজ করে। আমাদের যুদ্ধ বিমানও তারা চালাচ্ছে। কাজেই সব দিক থেকে মেয়েরা কিন্ত পিছিয়ে নেই। কাজেই এটা সবচেয়ে বড় কথা পুরুষরা যেটা পারে নারীরা তার চেয়ে আরও ভালো পারে, বেশি পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। এটাই প্রমাণ হয়েছে।


শেখ হাসিনা বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ। তিনি নারীদের পথ দেখিয়েছেন। তার সময়ে সমাজে নারীদের লেখা পড়া যেন অপরাধ ছিল। সেই অবস্থা থেকে তিনি নারী জাগরণে কাজ করেছেন। এখন মেয়েরা কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই।  
তিনি দেশের শতভাগ গৃহে আলো জ্বালবার পাশাপাশি দেশের সকল গৃহহীণকে ঘর করে দেয়ার মাধ্যমে একটা ঠিকানা গড়ে দেওয়ায় তাঁর সংকল্প পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, এর পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করে একটি শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ গড়ে তোলার লক্ষে তাঁর সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের সাফল্যের জন্য জনগণকে কৃতিত্ব দিয়ে ভবিষ্যতেও এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার  প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

 

সিলেট সান/এসএ

Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu

Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100

Phone: 01711487556, 01611487556

E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com

Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid

UK office : 736-740 Romford Road Manor park London  E12 6BT

Email : uksylhetsun@gmail.com

Website : www.sylhetsun.net