মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল বন্য প্রাণীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য যৌথভাবে দঁড়ির মাধ্যমে ৫টি স্থানে সেতু টানানো হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ১২৫০ হেক্টর আয়তনের। এই বনটি জীববৈচিত্রে ভরপুর। তবে বনের ভেতর দিয়ে রয়েছে রেল, সড়ক পথ ও ৩৩ হাজার কেভির বৈদ্যুতিক লাইন। ঝুঁকিপূর্ণ এ দুটি পথের ট্রেনে ও যানবাহনের চাকায় এবং বৈদ্যুতিক লাইনে পিষ্ট হয়ে ফি-বছর মারা যাচ্ছে অসংখ্য বন্যপ্রাণী। তাই বনটিতে বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকসহ বন্যপ্রাণীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পাঁচটি স্থানে দঁড়ির মাধ্যমে সেতু টানানো হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাউয়াছড়া বনের ভিতরে এসব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
আরো জানা যায়,লাউয়াছড়া বনকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। উঁচু নিচু টিলা জুড়ে এই উদ্যানে দেখা মিলে বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর। উদ্যান ঘোষণার সময়ের সার্ভে অনুযায়ী ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর কথা বলা হয়। এরমধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
বনটি বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য বিখ্যাত। তবে বনের ভেতর দিয়ে রেলপথ ও সড়কপথ এবং ৩৩ হাজার কেভির বৈদ্যুতিক লাইন থাকার কারনে ফি-বছর অসংখ্য বন্যপ্রাণী মারা যায়। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল। অবস্থা বিবেচনায় লাউয়াছড়া বনের প্রাণীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বনের ৫টি স্থানে দঁড়ি দিয়ে সেতু টানানো হয়েছে। উদ্যানকে দ্বি-খন্ডিত করে চলে যাওয়া সড়ক ও রেলপথের ২ পার্শ্বের উঁচু-উঁচু গাছের মধ্যে নাইলনের মোটা রশি দিয়ে সংযোগ স্থাপন করেছে দঁড়িটানা। এগুলোর দূরত্ব প্রায় ২২ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুন নাহারের নেতৃত্বে ৬ জনের গবেষক দল কাজটি করেছেন। তাদের সহযোগিতা করেন স্থানীয় আরো ৩ জন। গবেষক দলে আরো যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাবির বিন মোজাফফর, ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের বন্যপ্রাণী গবেষক সাবিত হাসান,গবেষক হাসান আল-রাজী,নেকমের ফিল্ড ম্যানেজার গবেষক তানভির আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র সজিব বিশ্বাস ও তানিয়া আক্তার। বন অধিদপ্তরের অর্থায়নে তারা বনের ভেতরের রেললাইনের ওপর ৪টি এবং সড়ক পথে ১টি দঁড়ির সংযোগ স্থাপন করেন। এগুলো মূলত ১০ সেন্টিমিটার ব্যাসের দঁড়ি। দঁড়ির সংযোগ কতটুকু কাজে লাগবে তা জানার জন্য বসানো হয়েছে ক্যামেরাও।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর সড়ক ও রেলপথের বিভিন্ন স্থান অনেক প্রশস্ত। এতে প্রাণীরা এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফ দিয়ে যেতে পারে না। কিছু প্রাণী নিচে নেমে সড়ক ও রেলপথ দিয়ে পাড়ি দেয়। এভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক প্রাণী মারা যায়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, সড়কে বিভিন্ন সময় চিত্রা হরিণ, বানর, মেছো বিড়াল, মুখপোড়া হনুমান, চিতা বিড়াল, সাপ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু হয়। তিনি আরো বলেন,দড়ির সংযোগগুলো লাউয়াছড়া বনের বানর জাতীয় প্রাণী, বিশেষ করে উল্লুকের জন্য খুবই উপকারী হবে। এক মাস পরপর ক্যামেরা দেখে বন্যপ্রাণীর চলাচলের বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যাবে।
সিলেট সান/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net