ঢাকা বোট ক্লাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনি। তাকে ওইদিন মারধরও করা হয়েছিল। প্রায় তিন মাস তদন্তের পর এ মামলায় আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে পুলিশ একথা বলছে।
সোমবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে সাভার থানার পুলিশ।
পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ৮ জুন রাত সাড়ে আটটায় পরীমনির বনানীর ভাড়া বাসায় আসেন তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ জিমি। এরপর জিমি মোবাইল ফোনে পরীমনির সহকারী তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমির সঙ্গে কথা বলেন। রাত ১০টার সময় কিছু খাবার নিয়ে পরীমনির বাসায় হাজির হন তুহিন। পরে পরীমনি, তুহিন, জিমি এবং ফাতেমাতুজ জান্নাত (পরীমনির পরিচিত) একসঙ্গে বাসায় খাওয়াদাওয়া করেন। রাত সাড়ে ১১টার সময় তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। তবে তুহিন কৌশলে পরীমনিদের রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বোট ক্লাবে নিয়ে যান। পরীমনিকে বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার তথ্য তুহিন আগেই ব্যবসায়ী নাসিরকে জানিয়ে রাখেন। তাদের জন্য একটি টেবিল প্রস্তুত করতে বোট ক্লাবের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিমকে বলেন নাসির। ক্লাবে ঢোকার পর পরীমনি ও তার সঙ্গীদের যে টেবিলে বসানো হয়, তার সামনে একটি টেলিভিশন ছিল। ক্লাবে ঢোকার পর নাসির ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলমের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন তুহিন। পরিচয়ের কিছুক্ষণ পর হাফপ্যান্ট পরে ক্লাবে আসা নিয়ে পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমির সঙ্গে শহিদুলের কথা-কাটাকাটি হয়।
অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ক্লাবে অবস্থান করার সময় পরীমনি, তুহিনসহ অন্যরা দুই বোতল মদ (ব্লু লেবেল) পান করেন। অন্য টেবিলে বসে তখন মদ পান করেন নাসির ও শহিদুল। রাত সোয়া একটার দিকে নাসির ও শহিদুল ক্লাব থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে তুহিন ও পরীমনি তাদের আবার বারে ডেকে নেন। পরে একসঙ্গে তারা মদ পান করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, নাসিরসহ অন্যদের সঙ্গে মদ পানের পর একপর্যায়ে পরীমনি ক্লাবের ব্লু লেবেলের ছয় বোতল মদ নিতে চান। তখন ক্লাবের খাবার সরবরাহকারী আসাদুজ্জামান পরীমনিকে বলেন, একটি তিন লিটারের ব্লু লেবেল মদের বোতল রয়েছে। পরে তিনি ওই মদের বোতল পরীমনির হাতে দেন। পরীমনির সঙ্গে থাকা ফাতেমাতুজ জান্নাতও ক্লাব থেকে দুই বোতল মদ (রেড ওয়াইন) কেনেন। এর দাম ছিল ৮৮ হাজার ৬১০ টাকা। এই টাকা পরিশোধ করেন তুহিন। তবে পরীমনি যে তিন লিটারের মদের বোতল নিয়েছিলেন, সেটির দাম ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
এই টাকাও পরিশোধ করতে হবে ভেবে তুহিন কৌশলে নাসিরকে দিয়ে বলান, এই মদের বোতলটি ক্লাবের ‘স্যাম্পল’ (নমুনা)। এটা পার্সেল দেওয়া যাবে না। একপর্যায়ে নাসিরের সঙ্গে পরীমনির কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তখন পরীমনিকে তর্কে না জড়াতে অনুরোধ করেন তার সঙ্গে থাকা জিমি ও ফাতেমা। তখন ক্ষেপে গিয়ে তাদের থাপ্পড় মেরে পরীমনি বললেন, ‘আমি কি ড্রাঙ্ক?’
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পরীমনির সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর তুহিনের উদ্দেশে নাসির বলেন, ‘এ রকম...(মানহানিকর শব্দ) মেয়েকে কেন ক্লাবে নিয়ে এসেছ?’ এ সময় নাসিরকে বাধা দেওয়া এবং এ ঘটনার ভিডিও করার চেষ্টা করেন জিমি। তখন নাসিরের সহযোগী শহিদুল জিমিকে থাপ্পড় মারেন। এ ঘটনা দেখে পরীমনি ক্ষেপে গিয়ে টেবিলের ওপরে থাকা গ্লাস, বোতল ও অ্যাশট্রে নাসিরের দিকে ছুড়ে মারেন। তবে নাসির সরে যাওয়ায় তার শরীরে লাগেনি। এরপরই পরীমনির উদ্দেশে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করেন নাসির ও শহিদুল। দুজনেই পরীমনিকে মারধর (থাপ্পড়) মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে নাসির ও শহিদুল ক্লাব ছেড়ে চলে যান। এরপর ক্লাবের কর্মচারীরা পরীমনিসহ অন্যদের ক্লাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে তিনি সেখানে বসে ছিলেন। এ সময় ক্লাবের কিছু লাইট, এসি ও ফ্যান বন্ধ করে দেন কর্মচারীরা। তখন পরীমনির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে লাইট ও ফ্যান ছেড়ে দেওয়া হয়। রাত দুইটার দিকে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ক্লাব ছেড়ে চলে যান।
পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ অভিযোগপত্রে কী লিখেছে, এখনও জানেন না তারা। শিগগিরই অভিযোগপত্রের অনুলিপি পেতে তারা আদালতে আবেদন করবেন।
গত ১৪ জুন ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন।
১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দু’টি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।’
‘অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পার।’
এজাহারে পরীমনি আরও বলেন, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।’
‘এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।’
এর আগে গত ১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলা করার আড়াই মাস পর গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। পরে তাকে বিদেশি মদসহ গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় তিন দফায় মোট সাত দিন তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারের ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর পরীমনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন।
সিলেট সান/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net