পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার পল্লীঘেঁষা মেঘালয়ের পাদদেশে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাঁশতলা জুমগাঁও। প্রকৃতির হিড়িক পর্যটকদের হৃদয় কেড়ে নেয়। প্রশান্ত মনকে শান্ত করতে, প্রকৃতি প্রেমিকরা সেখানে উপচেপড়া ভিড় জমায়। সব বয়সের মানুষ সেখানে অবসর সময় কাটায়। পড়ন্ত বিকেলে ছুটে আসেস প্রকৃতি প্রেমিকরা।
সীমান্তবর্তী পাহাড়ঘেঁষা দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউপিতে অবস্থিত বাঁশতলা জুমগাঁও। যেখানে মঙ্গোলীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত গারোদের আবাসস্থল। যদিও জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে কতিপয় গারোরা নিজেদের মান্দি বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে।
গারোদের পাশাপাশি মুসলিম জাতিরও বসবাস চোখে পড়ে জুমগাঁও (টিলা) পাহাড়ে। উপরে উঠতে চোখে পড়ে, দৃষ্টিনন্দন মন জুড়ানো কংক্রিটের সিঁড়ি। একপা, দুপা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় জুমগাঁও পাহাড়ের চূড়ায়। যেখানে আদি গোষ্ঠী উপজাতি মান্দিদের বসবাস। উঁচু-নিচু টইটম্বুর পাহাড়ে তাদের বেড়ে ওঠা। আকাশ ছোয়া হরেক রকম ভিন্ন জাতের গাছগাছালি যেন শুনশান করে বাতাসের সাথে কথা বলছে। দু'দিক থেকে মোলায়েম সংস্পর্শে, জুমগাঁও পাহাড়কে আগলে রেখেছে প্রতিবেশীর আকাশছোঁয়া পর্বতমালা।
পাহাড়ের গায়ে গায়ে মাটি থেকে একটু উঁচু করে নির্মিত বাড়িঘর, পাখপাখালির কলরবে মুখরিত চারদিক, হাজার রঙের ফুলের মাতাল বন্ধ, কোথাও ডাহুকের আনাগোনায় স্বভাবতই উদ্ভাসিত, উদ্বেলিত করে।
পাহাড়ের এমন নান্দনিক পরিবেশ অন্য যেকোন জায়গা থেকে আলাদা। পাহাড়ের প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষকে করে মাতোয়ারা। বৃষ্টির ফোটায় সবুজের স্নিগ্ধতায় আবেশ জড়িয়ে রেখেছে পাহাড়ি প্রকৃতি। প্রকৃতির সবুজ চাদর মোড়ানো বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে ওঠা সত্যিই রোমাঞ্চকর বটে।
কি অনন্ত সৌন্দর্যের সমাহার দেখে মনে হয়, স্বাধীনতার যুদ্ধে আত্মদানকারীরা সবুজ চাদর গায়ে দিয়ে পাহাড়কে মুড়িয়ে বসে আছে। গারোদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম, ওয়ানগালা। গারোদের আধি ধর্মের নাম সাংসারেক। খাদ্যাভ্যাসে হাঁস ছাগল শুকর। মদ তাদের অন্যতম পানীয়।
পোশাক-পরিচ্ছদে রয়েছে ভিন্নতা ও বৈচিত্র। সুতা কেটে তারা ঘরের মধ্যেই কাপড় বুনিয়ে ব্যবহার করে। দকমান্দা নারীরা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। রঙ্গিন কাপড়ও তাদের অধিক পছন্দের। পুরুষেরা ধূতি ও লেংটি পড়ে।
বাঁশতলা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ৫ নাম্বার সেক্টর। এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য শহীদদের কবর, রয়েছে তাদের স্বরনে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ, রয়েছে একটি মাজার, সুইমিং পুলের মতো কি অপরূপ ব্যবস্থা পাহাড়ের পাথর চুষে আসা ঠান্ডা পানিতে গোসল করার মজাই আলাদা। বাশঁতলা জুমগাঁও, মরিয়া হয়ে দেখতে আসে দর্শনার্থীরা।
শহর থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, ছুটি পেলেই আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসি বাশঁতলায়। এখানকার মানুষের এই সাধারন জীবন যাপন, পাহাড়ি আবহাওয়া, পাথর ঘেঁষা ঢান্ডা পানি। শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনার। সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। খুই ভালো লাগে। তবে এখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারনে চলাচল খুবই কষ্টকর। আমি সরকার সংশ্লষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট দাি জানাই। এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে পর্যটকদের আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
এদিকে, বাংলাবাজার হয়ে ছাতকের একমাত্র রাস্তাও যুদ্ধবিধ্বস্ত সড়কের ন্যায়। যা মানুষের জীবনকে তুলে দুর্বিষহ। একজন প্রকৃতি পিপাসু আগন্তুক বলেন, রাস্তাঘাটের বেহালদশার কারণে, আমাদের প্রাণ যায় যায়, আনন্দটাই ছাই হয়ে গেছে।
ভারী যান চলাচল করাতো দূরের কথা। সামান্য ভ্যান চলাচলই ঝুঁকি রয়েছে। নিত্যই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের জরাজীর্ণতার কারণে চরম বিপাকে এখানকার জনজীবন। সড়কের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ফিশারি সমতুল্য গর্ত। প্রধান সড়কের দু'পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সংকীর্ণ সড়কে পরিনত হয়েছে। কোথাও কোথাও রড মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্যান চালক মজিদ মিয়া আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, পরিবারের তাগিদে ভ্যান নিয়ে বের হতে হয়। কিন্তু সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ভয়, আতঙ্ক সর্বদাই মনে কাজ করে, না জানি কখন কি হয়।
প্রকৃতির এই অজর ভান্ডার সম্পর্কে জানতে গেলে স্থানীয়রা আরো বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় দিনদিন পর্যটকরা কমে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এখানকার ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা। সরকার যদি এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে তাহলে মুক্তিযুদ্ধের এ ৫ নং সেক্টর রূপান্তরিত হতে পারে পর্যটন শিল্পে। কর্মস্থান তৈরি হতে পারে শতাধিক বেকার যুবকের।
সিলেট সান/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net