মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পাত্রখোলায় কৃষক আব্দুল মতিন একই জমিতে ৩ জাতের তরমুজ চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তরমুজের জাত গুলো হলো ব্ল্যাকবেরি, মুধমালা ও হলুদ রংয়ের লালতীর ল্যন ফাই (এলএএন এফইআই) জাতের তরমুজ। এসব তরমুজ দেখতে প্রতিদিনই তার জমিতে দর্শনার্থীদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া তরমুজের পাশাপাশি অন্য জমিতে শষা, টমোটো. বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিছ, করলা রোপন করেছেন। তার সাফল্যের সংবাদ এলাকার মৌসুমী ফসল চাষীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জানা যায়, উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের নইনারপার গ্রামের মৃত মোজাহিদ মিয়ার ছেলে আব্দুল মতিন। কৃষি কাজই তার পেশা। বছরের প্রথম দিকে স্থাণীয় কয়েকজন ভুমি মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ১লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩০ কিয়ার জমি এক বছরের জন্য বন্ধক নেন। ৩০ কিয়ার জমির মধ্যে ২৮ কিয়ার জমিতে শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, মরিছ, করলা রোপন করেছেন গত মার্চ মাসে। আব্দুল মতিন আরো বলেন, তার র্টাচ মোবাইলের ইউটিউওবে নতুন জাতের তরমুজ চাষের প্রক্রিয়া দেখে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যোগাযোগ করেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উদ্যেগে ও লাল তীরের সার্বিক সহযোগিতায় বীজ সংগ্রহ করেন। বীজ পেয়ে তার ৩০ কিয়ার জমির মধ্যে ২ কিয়ার জমিতে গত জুন মাসে ব্ল্যাকবেরি, মুধমালা ও হলুদ রংয়ের লালতীর ল্যন ফাই(এলএএনএফআই) জাতের তরমুজ রোপন করেন। প্রায় ১ মাস ১০ দিনে ফলন এসে বিক্রির উপযোগি হয়ে যায়। তার রোপিত জমিতে তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। আব্দুল মতিন বলেন, তার ৩০ কিয়ার জমিতে তরমুজ সহ অন্যান্য ফসল রোপন থেকে শুরু করে ফলন উৎপাদন উপযোগী করতে ইতিমধ্যে প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
কৃষক আব্দুল মতিনের সাথে আলাপ করলে বলেন, তিন বিঘা জমিতে ব¬্যাকবেরি, মুধমালা ও হলুদ রংয়ের লালতীর ল্যন ফাই (এলএএন এফইআই) জাতের তরমুজ রোপন করেছেন। ৩ জাতের মধ্যে হলুদ রংয়ের ল্যন ফাই জাতটির সর্বাধিক ফলন হয়েছে। ফলের ওজন ও আকার সবাইকে আকৃষ্ট করেছে। এক একটি তরমুজের ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়। শুধু আকার নয় এর অসাধারণ মিষ্টি সাধ ও রয়েছে। বাজারে এর দামও বেশ ভালো পাচ্ছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন ,তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে এখন পর্যন্ত তার ব্যয় হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর এখন পর্যন্ত উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকার। ক্ষেতে যে পরিমাণ তরমুজ রয়েছে তাতে আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।
এছাড়া শষা,টমেটো,করলা,মরিছ বিক্রি করেছেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এখনও জমিতে ফসল রয়েছে। আগামীতে তিনি ব্যাপকহারে এই জাতের তরমুজ চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তার ক্ষেতের তরমুজ ফল দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ও কৃষকরা আসেন। তার কাছে আসা কৃষকরা ৩ জাতের তরমুজ চাষের কলা কৌশল জেনে আগামীতে তারা ও চাষ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মৌসুমী ফসল সহ চাষাবাদ করে আসছি। বর্তমানে আমার কৃষি জমিতে ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা শ্রমিক কাজ করে। প্রতি জনকে ২৫০/৩শত টাকা হারে মুজরী দিতে হয়। মাস শেষে মুজরীর টাকা দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। অনেক সময় দার দেনা করে তাদের বেতন দেই। কিন্তু আমার একটাই দুঃখ ,এখন ও পর্যন্ত সরকারী বা বে-সরকারী ভাবে কারো কাছ থেকে কোন সহযোগীতা পাইনি। ধরর্না দিয়েও কোন ধরনের প্রণোদনা পাইনি। সহযোগিতা করার দাবি জানান।
তরমুজ চাষ সম্পর্কে লাল তীর সীড লি. এর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তাপস চক্রবর্তী বলেন, ল্যন ফাই জাতটি সবুজ ডোরাকাটা ভেতরে হলুদ রংয়ের শাসযুক্ত ও মিষ্টি স্বাদের। উত্তম পরিচর্যায় এক একটি তরমুজের ওজন হয় ৫ থেকে ৬ কেজি। সারা বছরব্যাপী মাচায় ও মাঠে তরমুজ চাষ করা যায়। এ ফলে পরিপক্কতায় সময় আসে ৬৫ থেকে ৭৯ দিনে।
জাতটি চাষ করতে প্রতি শতকে বীজের প্রয়োজন ১ গ্রাম। উত্তম পরিচর্যাতে একরে ফলন উৎপাদন হয় ৩০ থেকে ৩৫ টন। কৃষকরা সঠিক দাম পেলে এই জাতগুলো চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়বে কৃষকদের মাঝে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুর বারী বলেন, প্রদর্শনীতে ৩ জাতের বীজ লাগানো হয়েছে। এর মাঝে অধিক ফলন ও ফলের সাধের পরিমাণে ও সবদিক থেকে ল্যন ফাই হলুদ জাতের তরমুজ সবার নজর কেড়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও কৃষকদের মাঝে এই জাত গুলোর চাষ ছড়িয়ে দিতে হবে।
সিলেট সান/এসএ
Editor Incharge: Faisal Ahmed Bablu
Office : 9-C, 8th Floor, Bluewater Shopping City, Zindabazar, Sylhet-3100
Phone: 01711487556, 01611487556
E-Mail: sylhetsuninfo@gmail.com, newssylhetsun@gmail.com
Publisher: Md. Najmul Hassan Hamid
UK office : 736-740 Romford Road Manor park London E12 6BT
Email : uksylhetsun@gmail.com
Website : www.sylhetsun.net