মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

সিলেটে সবজির বাম্পার ফলন মিটছে স্থানীয় চাহিদা

সুজিত দাশ::

২০২০-১১-২৭ ২৩:৩২:৫৬ /

 

ভোরের সূর্য আকাশে উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা ছুটে আসছেন বাজারে। কেউ আসছেন নৌকা ভর্তি সবজি নিয়ে আর কেউবা হাজির হচ্ছেন কাঁধে ভার নিয়ে সবজি বিক্রি করতে। প্রতিদিন সকালের এই দৃশ্য সহজেই বলে দেয় যে সিলেটে চলতি বছর সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। লাউ, মুলা, শষা, শিম, বেগুনসহ নানা জাতের সবজিতে বাজার ভরপুর। আগাম সবজি উৎপাদন করে ভালো দাম পেয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছেন কৃষক।

 

অন্যদিকে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সিলেটের বাইরেও যাচ্ছে এসব সবজি। যাতে করে বাড়তি লাভের চোখ দেখছেন ব্যবসায়ীরাও।

 

শহরতলীর বিভিন্ন গ্রামে প্রতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে করা হয় সবজির আবাদ। নিজের চাহিদা পূরণ করে সেই সবজি বাজারে এনে বিক্রি করেন কৃষকরা। তবে চলতি বছর সেই চিত্র একটু ভিন্ন। আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদন করে তুলনামূলক বেশি লাভের চোখ দেখছেন তারা৷ একইসাথে ফলন ভাল হওয়ায় বাড়তি আনন্দ দেখা দিচ্ছে তাদের মাঝে।

 

সরজমিনে শহরতলীর টুকেরবাজারে গিয়ে দেখা যায় এক অন্যরকম চিত্র। সকাল হতেই নদীর ঘাটে এসে ভিরছে সবজিভর্তি নৌকা। পার্শ্ববর্তী জাঙ্গাইল, কামাল বাজার, ঘোপাল, বাদাঘাট, খিয়াতপুর, মিরেরগাঁও, কুমারগাঁও, শিবের বাজার, ক্ষিয়াতপুর, খাজাঞ্চি, লামাকাজীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা ভর্তি এসব শাঁক-সবজি নিয়ে বাজারে হাজির কৃষকরা৷ সুরমার পাড়ে আরেক ঝলক চোখ ঘোরাতেই চোখে পড়ে ভিন্ন দৃশ্য। কেউ নৌকা থেকে সবজি তুলে আনছেন বাজারে, কেউ আনছেন ভারে, আর কেউবা ব্যস্ত সময় পার করছেন দর কশাকশিতে। বাজারে থোকা থোকা করে রাখা হয়েছে মুলা, লাউ, বেগুন, শিম, লালশাক, সরিষা পাতা, মুলা শাক, ধনেপাতা, শষা, কাঁচামরিচসহ নানান জাতের সবজি। সেই সবজি আবার টাকার বিনিময়ে হাত বদল করে গাড়িভর্তি হয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন বাজারে, ভালভাবেই পূরণ করছে বৃহত্তর সিলেটের মানুষের চাহিদা।

 

ভারে করে লালশাক নিয়ে আসা ফুল মিয়া সিলেট সান'কে জানান, 'প্রতিদিনই আমি বাজারে লালশাক নিয়ে আসি। হাজারখানেক টাকায় বিক্রি করতে পারি। এগুলো আমার নিজের জমিতে উৎপাদন করা। আশা করছি সব মিলিয়ে এটা ভালো লাভ হবে৷ ফুলকপিরও ভালো ফলন হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকে ফুলকপি বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যাবে।'

 

টুকেরবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী জয় দাশ জানান, 'চলতি বছর অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যবসা হচ্ছে৷ উৎপাদন বেশি থাকায় চাহিদার যোগান দিতে সমস্যা হচ্ছেনা৷ বাজারে এখন শুধু স্থানীয় সবজির রাজত্ব। শহরের বিভিন্ন বাজারের চাহিদা এখানকার সবজি দিয়েই পূরণ হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত দামটা একটু বেশি। তবে আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

 

পাইকারি দরে সবজি কিনতে আসা ভাসমান সবজি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, 'আমি দীর্ঘদিন ধরে সবজির ব্যবসা করি। নগরীর বাগবাড়ি, কাজলশাহ, মধু শহিদ, রিকাবিবাজার ও লামাবাজার এলাকায় আমি সবজি বিক্রি করি। সব সময় নগরীর সোবহানীঘাট থেকে সবজি ক্রয় করে নিয়ে আসি বিক্রি করার জন্য। কিন্তু শীতকালে স্থানীয় সবজির প্রচুর উৎপাদন হয় পাশাপাশি স্থানীয় সবজির চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভও করা যায়।'

 

গরীর সোবহানীঘাটের পাইকারি আড়ৎদার বিরু দাস জানান, 'সিলেটের সব জায়গায় লোকাল সবজির চাহিদা বেশি। বাজারে বাইরের সবজির যোগান ঠিকই আছে, কিন্তু সিলেটবাসী একটু বেশি দামে হলেও স্থানীয় সবজি বেশি কিনেন। আমদানি করা লাউ যেখানে ২৫-৩০ টাকা হলে কেনা যায় সেখানে ক্রেতারা ৫০-৬০ টাকা দরে স্থানীয় লাউ কিনে খাচ্ছেন।'

 

বেলা বাড়ার সাথে সাথে খুচরা ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে নগরীর রিকাবিবাজারে। সকাল ৯টার দিকে এসে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড় চোখে পরার মতো। সকলের চাহিদা সতেজ সবজি। সবজি কিনতে আসা নিয়ামুল হোসেন জানান, 'একটা ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করি। যার কারণে প্রতিদিন সকালে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কাজের ফাঁকে এখান থেকেই কাঁচাবাজার করে নেই। দেখতে তরতাজা সবজিগুলো দামে একটু বেশি হলেও বাসি সবজির থেকে ভালো।'

 

কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কর জানান, 'এসব এলাকার কৃষকেরা আগেও সবজি উৎপাদন করেছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদের শিক্ষার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে কোন জমিতে কোন ফসল উৎপাদন করতে হবে বা কি পরিমাণে সার ও কীটনাশক দিতে হবে সেই জ্ঞান তারা অর্জন করে নিয়েছেন যার কারণে ফলন আগের থেকে অনেক ভালো হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে।'

 

এদিকে, খুচরা বাজারে লালশাক, পালংশাক, সরিষাশাক, মুলাশাক, লাউশাক আঁটিভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকা দরে। এছাড়াও লাউ প্রতিটি ৪০-৬০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকা, গাজর কেজি প্রতি ৭০-৮০, শালগম কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা, মূলা কেজি প্রতি ২০-৩০, ফুল কপি কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা, টমেটো কেজি প্রতি ​১০০-১২০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি প্রতি ১২০-১৫০ টাকা ও বেগুন কেজি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

সিলেট সান/এসএ

এ জাতীয় আরো খবর

চলমান বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

চলমান বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

বৃষ্টির দেখা নেই, চা শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বৃষ্টির দেখা নেই, চা শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বন্যায় সবজি উৎপাদনে শঙ্কা,  ১ লাখ হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

বন্যায় সবজি উৎপাদনে শঙ্কা, ১ লাখ হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদকৃষি প্রযুক্তি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদকৃষি প্রযুক্তি

বন্যায় সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় পৌনে ২ লাখ একর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় পৌনে ২ লাখ একর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত

কান্দিগাওয়ে বারি হাইব্রিড বেগুন-৪ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

কান্দিগাওয়ে বারি হাইব্রিড বেগুন-৪ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত