বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

একুশ আমাদের অহংকার একুশ মানে বাংলাদেশ

অমল কৃষ্ণ দেব::

২০২১-০২-২০ ১৩:১২:৪৯ /

 
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট। জন্ম নেয় ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানের ছিল দুটি অংশ। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। অপর অংশটি পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসনভার পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল।

পূর্ব বাংলার ভাষা,  সাহিত্য,  সংস্কৃতি,  অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতির উপর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের করায়ত্ত করতে শুরু করে এবং বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রতিবাদ ও আন্দোলন -সংগ্রাম গড়ে তুলে। মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্যে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। এবং পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী বাঙালি জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ হয়। মাতৃভাষা রক্ষার চেতনা থেকে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তানের  সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন - সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থান গড়ে তোলে। পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই এই রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের দাপ্তরিক ভাষা উর্দু করার প্রথম চেষ্টা শুরু করলে বাঙালিদের নেতা শেরে বাংলা এ,কে,ফজলুল হক এর তীব্র বিরোধিতা করেন।

১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখনই বিতর্কটি পুনরায় শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ১৭ই মে চৌধুরী খলীকুজ্জমান এবং জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ভাষা বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এবং ড. মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ ক'জন বুদ্ধিজীবি প্রবন্ধ লিখে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পূর্ব বাংলায় এর তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠে। লেখালেখি শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিছিল, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুর্নগঠিত হয়। এ সংগঠন ১১ই মার্চ বাংলা ভাষা দাবি দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। ঐ দিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগানসহ মিছিল ও পিকেটিং করা অবস্থায় শেখ মুজিব, শামসুল হক ও অলি আহাদ সহ উনসত্তর জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলা ভাষার জন্য প্রথম রাজবন্দিদের শীর্ষ স্হানীয় ছিলেন তৎকালীন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতার নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় ১২-১৫ই মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়।   ভাষার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করা হয়।

কারাবন্দি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূূূূচি পালনে ছাত্র আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা কর্মীদের ডেকে পরামর্শ দেন। দেশব্যাপী জনমত গড়ে উঠতে থাকে। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ১৪৪ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি বর্ষণ করলে আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহীদ হন। অনেকে আহত হন। ঢাকায় ছাত্রহত্যার খবর দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশাল শোক মিছিল বের হয়। সেখানে পুলিশের হামলায় শফিউর রহমান শহীদ হন। শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য ঢাকায় ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে একটি শহীদ মিনার নির্মান করেন। ১৯৫৩ সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।


১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাদেশের ২১শে ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। একুশ আমাদের অহংকার। একুশ মানে বাংলাদেশ। একুশ আমাদের সমৃদ্ধি। একুশ মানে কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করা। আমাদের ললাটে জড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাই আমাদের অহংকার। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষা সমাদৃত। বাংলা আমাদের দেশমাতৃকার শক্তি। জয় বাংলা।

 

লেখক:: জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, দৈনিক উত্তর পূর্ব

 

সিলেট সান/এসএ

এ জাতীয় আরো খবর

একজন সেলিম আহমেদ ও তার মানবতা

একজন সেলিম আহমেদ ও তার মানবতা

এসএস‌সি '৯৪ ব্যাচের সহপাঠীরা সি‌লে‌টে এক‌ত্রিত হবে ২৪ ডিসেম্বর

এসএস‌সি '৯৪ ব্যাচের সহপাঠীরা সি‌লে‌টে এক‌ত্রিত হবে ২৪ ডিসেম্বর

টেক জায়ান্ট ইনফোসিসে ইয়ুথ ডেলিগেশনের মুগ্ধতা

টেক জায়ান্ট ইনফোসিসে ইয়ুথ ডেলিগেশনের মুগ্ধতা

পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

পদ্মা সেতু ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

স্মরণ : বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের অভাব 'অনুভব' করেন নগরবাসী

স্মরণ : বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের অভাব 'অনুভব' করেন নগরবাসী

বীরের সঙ্গে, বীরবন্ধুর দেশ ভারতের মেঘালয়ে

বীরের সঙ্গে, বীরবন্ধুর দেশ ভারতের মেঘালয়ে