২০২১-০১-১৫ ০০:১৪:২২ / Print
৬ বাংলাদেশি হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্টারপোল। গ্রেপ্তারকৃত জাফর ইকবালে বাড়ি কিশোরগঞ্জে অন্যজনের বাড়ি শরীয়তপুরের। পুলিশের আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির করা মোস্ট ওয়ান্টেড (রেড লিস্টেড) তালিকায় ছিলো এই দুই মানবপাচারকারি।
মানবপাচারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ দুই গডফাদারকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৫ জানুয়ারি ইতালির কসেঞ্জা শহরে জাফর ইকবাল গ্রেপ্তার হন। তাকে দেশে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে মাদারীপুর জেলায় দায়ের হওয়া মানবপাচারের একটি মামলায় গত ৮ নভেম্বর দুবাই থেকে ফেরার পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন শাহাদাত হোসেন।
গ্রেপ্তারের পর তাকে মাদারীপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে শাহাদতকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পারে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম আক্তারুজ্জামান দুজনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, উচ্চ বেতনে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানির নামে পাচারের পর ভুক্তভোগীদের অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়কালে লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে গত বছরের মে মাসে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১১ বাংলাদেশি আহত হন। এ বিষয়ে তদন্তের পর বিদেশে পলাতক আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী ছয় গডফাদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, লিবীয় মাফিয়াদের হাতে যে ২৬ বাংলাদেশি খুন হয়েছেন, তাদের মধ্যে আকাশ ওরফে সাদ্দাম হোসেন, মাহবুব, মোহাম্মদ আলী, মাসুদ মিয়া ও রাজনকে পাচার করে গডফাদার জাফর ইকবালের নেতৃত্বাধীন চক্র। একই ঘটনায় সজল, জানু মিয়া ও সৌরভ নামে আরও তিনজন আহত হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে।
অন্যদিকে শাহাদাত হোসেনের চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে লিবীয় মাফিয়াদের হাতে খুন হন মাদারীপুরের শামীম হাওলাদার।
ইউরোপে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষজনকে পাচারের পর পথিমধ্যে জিম্মি করে রেখে দেশে অবস্থানরত স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় এবং লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্টারপোল। পুলিশের আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির করা মোস্ট ওয়ান্টেড (রেড লিস্টেড) তালিকায় থাকা এ দুজন হলেন কিশোরগঞ্জের জাফর ইকবাল এবং শরীয়তপুরের শাহাদাত হোসেন।
ডিবির উপকমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা প্রদানের আগেই দালালচক্র ১০-১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করত। লিবিয়ায় পাঠানোর নামে একই পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ইউরোপ গমনপ্রত্যাশীদের বেনগাজির মালগুদামে রেখে নগদ অর্থ কেড়ে নেওয়াসহ মুক্তিপণ আদায়ের জন্য পানি-খাদ্য বন্ধ রাখা এবং ইউরোপের পাঠানোর বাকি টাকা আদায়ের অজুহাতে বর্বর শারীরিক নির্যাতন, অত্যাচার করা হতো।
সিলেট সান/এসএ