শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

জঙ্গিবাদ ছাড়লেন সিলেটের শাওন-নুসরাত

সিলেট সান ডেস্ক::

২০২১-০১-১৪ ০৫:২৭:৪৮ /

জীবনে শান্তি ফিরে পেতে জঙ্গিবাদ ছাড়লেন সিলেটের শাওন ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত। এরমধ্যে শাওন সিলেটের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে হিযবুত তাহ্‌রীরে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন।

পরে ২০১১ সালে মেডিকেল শিক্ষার্থী নুসরাতকে বিয়ে করেন। নুসরাতও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে সংগঠনের নির্দেশনায় তাঁরা ঢাকায় চলে আসেন। জঙ্গিবাদে জড়ানোয় শাওন ও নুসরাতের সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের দূরত্ব তৈরি হয়। পারিবারিক জীবনে অশান্তি আসে। তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে র‍্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‍্যাব সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিলেটের দুজনসহ ৯ জন ‘আত্মসমর্পণ’ করেন।

‘আত্মসমর্পন করা’ ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় জানানোয় র‍্যাব বিনা শর্তে তাঁদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে।

নয়জন ব্যক্তি হলেন- সিলেটের শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), নুসরাত আলী জুহি (২৯), কুমিল্লার আবিদা জান্নাত (১৮), আবদুর রহমান সোহেল (২৮), চাঁদপুরের মোহাম্মদ হোসেন ওরফে হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), ঝিনাইদহের মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), চুয়াডাঙ্গার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) ও মো. সাইদুর রহমান (২২)।

র‍্যাব জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী নয়জনের মধ্যে ছয়জন জেএমবি ও তিনজন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুনর্বাসনের ব্যাপারে র‍্যাবের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ তাঁরা ‘আত্মসমর্পণ’ করলেন।

র‍্যাব বলেছে, এই নয়জন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ান। তাঁরা কোথাও নিজেদের আসল নাম-পরিচয় ব্যবহার করতে পারতেন না। সব মিলিয়ে তাঁরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। পরে র‍্যাবের মাধ্যমে তাঁরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে র‍্যাব তাঁদের উৎসাহী করে। বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়।

র‍্যাব জানিয়েছে, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে তারা নয় ব্যক্তিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া তাঁরা পুনরায় যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়েতেই সিলেটের তরুণ শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত জড়িয়ে পড়েছিলেন উগ্রবাদী এক সংগঠনে। পরে ডাক্তার স্ত্রী নুসরাত আলী জুহিকেও সেই জালে জড়িয়ে নেন। সংগঠনের নির্দেশে চার বছর আগে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পরিবার থেকেও আলাদা হয়ে যান। কিন্তু সে সবই যে ‘ভুল’ ছিল, এখন তা বুঝতে পারছেন তারা।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ‘ধর্মীয় ব্যাখ্যায়’ আকৃষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে তিনি হিযবুত তাহরীর যুক্ত হন। কয়েকজন বন্ধুকেও ওই সংগঠনে যুক্ত হতে উৎসাহ দেন।

২০১১ সালে মেডিকেল ছাত্রী জুহির সাথে বিয়ে হয় শাওনের। স্বামীর উৎসাহে জুহিও একসময় ওই সংগঠনে যোগ দেন জানিয়ে শাওন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতার কাজে তারা জড়াননি। ২০১৬ সালের পর থেকে সংগঠন থেকে তাদের বলা হয়, পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তারা ঢাকার এসে থাকতে শুরু করেন।

এদিকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ... আমার স্ত্রী একজন চিকিৎসক, কিন্তু এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে থাকতে তার জীবনে অশান্তি আর গ্লানি নেমে আসে। এক কথায় আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। তাছাড়া আমার দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যত... যোগ করেন তিনি।

শাওন বলেন, একটা সময় আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। বুঝতে পারি, আমি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার শিকার। আমার ভেতরে নতুন করে বোধোদয় হয়। তখন পরিবারের সাথে আলোচনা করি, নতুন করে বেঁচে থাকার কথা বলি… তারপর এখানে আসা।


আবিদা উগ্রবাদে আকৃষ্ট হওয়ার পর পরিবারকে না জানিয়ে ২০১৮ সালে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যকে বিয়ে করেন। পরে তিনি পরিচিতদের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছা জানান। শাওনের পরামর্শে তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

সোহেল জেএমবির সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করেন। ফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তিনি র‍্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

মোহাম্মদ হোসেন ২০১২ সালে ঢাকায় নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। সাইফুল্লাহর মাধ্যমে তিনি জেএমবিতে যুক্ত হন। পরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সহপাঠীর মাধ্যমে জেএমবিতে যুক্ত হন। তাঁর কিছু সঙ্গী গ্রেপ্তার হলে তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। একপর্যায়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস সাইফুল শিক্ষার্থী অবস্থায় জেএমবিতে যোগ দেন। তিন নিজ এলাকা ঝিনাইদহে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালান। নিজেদের কয়েকজন সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তিনি পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরে তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

মামুন ও সাইদুর জঙ্গিবাদের ভিডিও দেখে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মুখে তাঁদের অনেক সঙ্গী আত্মগোপনে চলে যান। সঙ্গীদের থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরিবার থেকেও দূরে চলে যান। একপর্যায়ে তাঁরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

সিলেট সান/এসএ

এ জাতীয় আরো খবর

শনিবার ৮ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না

শনিবার ৮ ঘন্টা গ্যাস থাকবে না

রাগ করে স্ত্রী চলে যাওয়ায় বাবাকে খুন করল ছেলে

রাগ করে স্ত্রী চলে যাওয়ায় বাবাকে খুন করল ছেলে

বৌভাতে যাওয়া হলনা তাদের: দরবস্তে পিকআপ-লেগুনার সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬

বৌভাতে যাওয়া হলনা তাদের: দরবস্তে পিকআপ-লেগুনার সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬

 দরবস্তে লেগুনা ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ৭

দরবস্তে লেগুনা ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ৭

 আদালতে হাজিরা দিতে আসার পথে ফেঞ্চুগঞ্জে হামলা, তরুন খুন, ভাই আহত

আদালতে হাজিরা দিতে আসার পথে ফেঞ্চুগঞ্জে হামলা, তরুন খুন, ভাই আহত

প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে: মন্ত্রী ফারুক খান

প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে: মন্ত্রী ফারুক খান