এমএম সামছুল ইসলাম,জুড়ী (মৌলভীবাজার) : পৌষ পার্বনের শেষে সিলেটের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ উল্লাসের সাথে আয়োজন করা হতো ঐতিহ্যবাহী "পুঙ্গাপুড়া" উৎসব।
চুঙ্গার ভেতরে বিরইন চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হতো চুঙ্গাপুড়া পিঠা। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোম বাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়।
ঢলু বাঁশের চুঙ্গা দিয়ে তৈরি এ পিঠা ‘চুঙ্গাপুড়া’ পিঠা নামে বিখ্যাত। এলাকার অন্যতম ঐতিহ্য এ পিঠা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।
ঢলু বাঁশ ছাড়া চুঙ্গা পিঠা তৈরি করা যায় না। ঢলু বাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলু বাঁশে অত্যাধিক রস থাকায় আগুনে পোড়েনা এটি, ভেতওে রচালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়।
চুঙ্গা পিঠা পোড়াতে খড় (নেড়া) দরকার পড়ে। আগের মতো এখন আর গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এ পিঠার দেখা মিলেনা।
পাহাড়ে এ বাঁশ নেই বলে বাজারে ঢলু বাঁশের দামও এখন বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে এই ঢলু বাঁশ ক্রয় কওে নিয়ে যান নিজ নিজ এলাকার বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য। প্রতি বছরের ন্যায় মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ঐতিহ্যবাহী বিরাট মাছের মেলা বসে। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাকালুকি, হাইল হাওর ও নদী থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হালকা মসলা দিয়ে ভেজে
(আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে‘চুঙ্গাপুড়া’ পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেট বিভাগের অন্যতম ঐতিহ্য। চুঙ্গা পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিরইন ধানের চাল। এ ধান এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না। জুড়ীর লাঠিটিলা ফুলতলা, সাগরনাল ও চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ঢলু বাঁশ পাওয়া যেত।
তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ি এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলু বাঁশের জন্য। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। জুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক জানান, আগে কম-বেশি সব বাড়ীতেই এর আয়োজন হতো।
এখনো সিলেটের প্রায় বাড়ীতে ইহা দেখতে পাওয়া যায়। ইহা খেতে বারী মজা। আবারো সেই পুরনো ঐতিহ্য "পুঙ্গাপুড়া পিঠা" প্রতিটি ঘরে ঘরে আয়োজন করে সিলটির এ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সিলেট সান।/এম এম সামছুল ইসলাম