শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইংরেজী, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বাংলা ENG

স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’য গিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

বিশেষ প্রতিনিধি ::

২০২২-১০-২০ ১৬:৫৩:৫০ /

যুক্তরাজ্যে সিলেটিদের রয়েছে আলাদা একটা ইমেজ। এমপি থেকে শুরু করে মেয়র সবখানেই রয়েছেন সিলেটিরা। অনেকে লন্ডনকে বলে থাকেন এক টুকরো বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য। রয়েছে আলতাব আলী পার্কও।

এ কারনে লন্ডনের প্রতি আলাদা একটা টান রয়েছে সিলেটিদের। তবে বর্তমান সময়ে ভাল নেই ‘স্টুডেন্ট ভিসায়’ সিলেট থেকে যাওয়া তরুণ- তরুণীরা। একদিকে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘শিক্ষা ভিসায়’ যুক্তরাজ্যে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে সিলেটে।

অন্যদিকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষা ভিসা’ নিয়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে গিয়ে পড়ছেন বিপাকে। সেখান থেকেই বিভিণœ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরছেন অনেকে। সচেতনমহল থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঝেমুনে যুক্তরাজ্য যাওয়ার পরামশ্য দেওয়া হচ্ছে।্সিলেটে শিক্ষা ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত সংগঠন ‘ফরেন এডমিশন এন্ড ক্যারিয়াডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’র দ্বার প্রসারিত হয়। ওই সময় থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী। এরপর করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়।

এ অবস্থায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, ২০২১ সালে ১১ হাজার শিক্ষার্থী ও ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন।

গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক দেওয়ান বেলাল আহমদ চৌধুরী তার ফেসবুক টাইমলাইনে উদ্বেগের সঙ্গে লিখেন, (হুবহু তার বক্তব্য তুলে ধরা হল) ‘বাংলাদেশ থেকে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় বা ওয়ার্কপারমিট নিয়ে ইংল্যান্ডে আসছেন বা এখনও আসার জন্য আরও লাইনে আছেন, তাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করে বলবো,

আসার আগে আপনারা ভালো করে চিন্তা করে” যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাবেন, এই দেশে আসার পরেই আপনাকে প্রথমে যে বিষয়গুলো ফেইস করতে হবে, থাকার জায়গা, খাওয়ার জায়গা এবং আপনার ইউনিভার্সিটির ফি, এগুলি সহজেই পেয়ে যাবেন” বলে মনে হয়না, কাজকর্ম না থাকলে বাসা ভাড়া থাকা-খাওয়া কিভাবে করবেন। পরিষ্কার করে বলছি, কোন আত্মীয়-স্বজন যদি থাকে,

তাদের উপরে ডিপেন্ড হয়ে আসার জন্য চিন্তা করবেন না, কারণ যুক্তরাজ্যের যে ঘরগুলো আছে, সেই ঘর গুলো অনেক ছোট এবং মেহমান থাকার জন্য কোন পরিবেশ এখানে নেই. হয়তো দুই দিন চার দিন বা এক মাস কেউ থাকলে থাকতে পারে কিন্তু এর বাহিরে কেউ কাউকে রাখতে চায়না,

কারণ এখানে এক্কেবারে মাপ অনুযায়ী ঘরে থাকা হয়, আশা করি ভালো করে বুঝে শুনে আসবেন এবং অনেকেই পার্কে বা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন, অনেক শীতের মধ্য মানুষ থাকছে, তাই অনেক চিন্তা করে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাবেন, ভালো করে” বুঝে শুনে আসবেন’।

লন্ডন থেকে আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করে মুঠোফোনে সমকালকে জানান, লন্ডনের অথনৈতিক অবমস্থা তেমন ভাল নয়। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। উন্নত বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগে তখন তারা উন্নয়নশীল দেশের উপর চোখ ফেলে।

তারা তাদের দেশে যাওয়ার জন্য সহজ পথ তৈরী করে দেয়। আর অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রাষ্টের লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ি তাদের চৌম্বকীয় অফারে। এতে তারা লাভবান হয় এবং তাদের অর্থনৈতিক বলবান হয়। একারনে আমাদের উচিত বুঝে শুনে পা বাড়ানো।

তবে যারা লন্ডনে ভাল অবস্থানে আছেন বা তাদের আত্মীয় স্বজন গেলে সেক্ষেত্রেও অনেকটা সহযোগিতা মিলে। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম থেকে সিলেট থেকে যাওয়া এক শিক্ষাথী জানান (ছদ্দ নাম মোহনা ইসলাম) জানান, ভাই বড় কষ্টে আছি। আমার সন্তানকে নিয়ে পার্কে থাকতে হচ্ছে।

কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী বিষয়টি দেখে ব্যবস্থ্ াকরে দিয়েছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন চলব বলতে পারছিনা। তিনি জানান, তার লন্ডন আসার সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। তিনি যার উপর নির্ভর করে এসেছিলেন সে দুই একদিন পরই তার মত করে চলে গেছে। আর কেউ যেন এমন চিন্তা না করেন এমনটি জানান ওই শিক্ষার্থী।

ফরেন এডমিশন এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. ফেরদৌস আলম বলেন, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার জন্য শিক্ষা ভিসা অনেক সহজ করা হয়েছে। যে কারণে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। যারা শিক্ষা ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন তাদেরকে শিক্ষাকোর্স সম্পন্নের অনুরোধ জানান ফেরদৌস আলম।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সারা দেশের মধ্যে সিলেটের শিক্ষার্থীরাই দেশের বাইরে বেশি যাচ্ছেন শিক্ষা ভিসায়। পারিবারিক কারণে সিলেটিদের ইংল্যান্ড যাওয়ার প্রবণতা বেশি তাই সিলেটের শিক্ষার্থীরা ইউকেতে বেশি আবেদন করছেন। তবে স্পাউসের একটা ‘লিমিটেশন’ হচ্ছে মাস্টার্স প্রোগ্রাম না হলে কেউ স্পাউস নিতে পারে না।

সিলেট ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশন (সেলটা)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট খালেদ চৌধুরী জানান, তাদের সংগঠনের অধীনে ৪০টির বেশি আইইএলটিএস সেন্টার রয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ভিসা বেশি হচ্ছে।

যে কারণে ইংরেজি শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় বেড়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতি সপ্তাহে একটি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। মাসে ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মো. কফিল হোসেইন চৌধুরী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের ভিসা সাকসেস রেট ভালো হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য বহির্গামী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

যে কারণে আইইএলটিএস পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও দু-তিন গুণ বেড়েছে।’ ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তার এখানে ইসল ক্লাস করানো হয়। যারা দক্ষ তাদেরকেই হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে যুক্তরাজ্যে গিয়ে তারা কোন বিপাকে না পড়েন। তবে দক্ষ কর্মীরা বিদেশে গেলে বিপাকে পড়বেনা বলে তিনি জানান।

এ জাতীয় আরো খবর

মধ্যনগরে মেডিকেল চান্স পেয়ে আরো দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রত্যয়

মধ্যনগরে মেডিকেল চান্স পেয়ে আরো দৃঢ় প্রত্যয়ী প্রত্যয়

 নানা দেশে নানাভাবে বড়দিন উদযাপন হয় যেভাবে

নানা দেশে নানাভাবে বড়দিন উদযাপন হয় যেভাবে

ইফতারিতে খেজুর, জানলে অবাক হবেন!

ইফতারিতে খেজুর, জানলে অবাক হবেন!

৭ শতাধিক ডাক কর্মচারীর জীবন গাড়ি  চলছে ৪ হাজার টাকার বেতনে

৭ শতাধিক ডাক কর্মচারীর জীবন গাড়ি চলছে ৪ হাজার টাকার বেতনে

জুড়ীতে শত বছরের রথযাত্রায় হাজারো লোকের সমাগম

জুড়ীতে শত বছরের রথযাত্রায় হাজারো লোকের সমাগম

ইতিহাস গড়লেন ট্রান্স জেন্ডার অংকিতা

ইতিহাস গড়লেন ট্রান্স জেন্ডার অংকিতা