
২০২২-০৭-২৪ ২১:৫০:৩১ / Print
জুন-আগস্ট চায়ের ভরা মৌসুম। এ ভরা মৌসুমেই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১৭টি চা বাগান। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাগানগুলো যথাযথভাবে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে পারছে না।
প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় কারখানায় নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা। এছাড়া উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চা-পাতার গুণগত মান কমে যাচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে এ বছর চা-বাগানগুলোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা।
চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চা পাতা তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। কিন্তু লোডশেডিং ব্যবস্থা চালু হওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চা শিল্প। এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই-তিন ঘন্টা থাকছে না। ২৪ ঘন্টায় গড়ে ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চা-পাতার গুণগত মান কমে যাচ্ছে।
এর প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাজারেও। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানী সংকটের কারণে গত মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সরকারি নির্দেশনায় বিদ্যুৎ রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মঙ্গলবার-বৃহস্পতিবার ৭২ ঘন্টায় ১০৩ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে মাত্র ৪৯ মেগাওয়াট। শুক্রবার বেশিরভাগ সময় সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।
শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ১৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে মাত্র ৬ মেগাওয়াট। রাতেও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম ছিল। রোববার (২৪ জুলাই) দিনরাত মিলিয়ে চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ মেলেনি বিদ্যুতের।দক্ষিণগুল চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল হাসান মাছুম বলেন, ‘এখন আমাদের পিক সিজন।
চা পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে ২৪ ঘন্টা কারখানা চালু রাখতে হয়। এই সময়ে ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। পাতা জ¦লে যাচ্ছে।
আমাদের কয়েক হাজার কেজি কাঁচা পাতা নষ্ট হয়েছে। জেনারেটর চালিয়ে কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।‘গত বছর এই সিজনে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়েছিল।
এবার প্রায় সাড়ে চার লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’ ছোটলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আহমদ বলেন, ‘এপ্রিল-ডিসেম্বর সিজন।
আর পিক সিজন হচ্ছে জুন-আগস্ট তিন মাস। এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন ৭-৮ হাজার কেজি কাঁচা পাতা কারখানায় আসছে। এ সময় প্রতিদিন ১১-১২ ঘন্টারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থায় কাঁচা চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় হাজার হাজার কেজি নষ্ট হচ্ছে।
’মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুহেল রানা চৌধুরী বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার দিন-রাত মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় আমরা অর্ধেকেরও কম সরবরাহ পেয়েছি। শুক্রবার বেশিরভাগ সময় সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।
শনিবার দিনে চাহিদার অর্ধেকেরও কম সরবরাহ পেয়েছি। রোববারও একই অবস্থা। এ জন্য লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ফলে চা-বাগানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে চা শিল্পের ক্ষতির বিষয়টা আমরা অনুধাবন করছি। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।