২০২২-০৬-২৮ ০০:১৮:০৯ / Print
বন্যা পরিস্থিতির ধীরে কিছুটা উন্নতি হলেও সিলেটের সুরমা- কুশিয়ারার তিনটি পয়েন্টে দিয়ে পানি বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটসহ সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সিলেট নগরীর নিচু এলাকায় এখনও বন্যার পানি রয়েছে। এদিকে, বাড়ি-ঘর, হাটবাজার থেকে বন্যার পানি ধীর গতিতে নামায় বানভাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও দুর্গম স্থানে বসবাসকারী পানিবন্দী মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না।আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখনো লোকজন রয়েছেন।
হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থান দিয়ে এখনও বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে।
*দক্ষিণ সুরমা :* আমাদের দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। পানি কয়েক দিন ধরে থমকে আছে। গত এক দিনে প্রায় ২ ইঞ্চি পানি নেমেছে। ৭-৮ দিন ধরে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী। ঘরে ও রাস্তায় এখনো পানি রয়েছে।
যেভাবে পানি কমছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। নতুন করে বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়তে পারে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও দুর্গম স্থানে বসবাসকারী পানিবন্দী মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে না। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখনো লোক রয়েছেন।
উপজেলার মোগলাবাজার, দাউদপুর, জালালপুর, সিলাম, লালাবাজার, তেতলী ইউনিয়ন বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। *সুনামগঞ্জ* : সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানি কিছুটা কমলেও হাওর পাড়ের গ্রামগুলোতে দুর্যোগ রয়ে গেছে। গ্রামগুলোতে এখনও পানি থৈ থৈ করছে।
সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পাড়ার বাসা-বাড়িতে লোকজন ফিরতে শুরু করেছেন। তবে, বাসা বাড়িতে পঁচা ও নর্দমার পানি থাকায় পরিষ্কার করতে লোকজনকে বেগ পেতে হচ্ছে। এদিকে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। মেডিকেল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় কাজ করছে।
হবিগঞ্জ হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পানি ধীর গতিতে কমছে। বন্যায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত দু’সপ্তাহ যাবৎ অব্যাহত বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার ৫৪টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। সরকারী হিসেবে ২৪ হাজার ২শ ৩০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
৮৩ হাজার ৪শ ৯০ জন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে ২১ হাজার ৭৩ জন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এ পর্যন্ত ৪১৫ মেঃ টন চাউল, ১৫ লাখ টাকা নগদ ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলায় ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কুলাউড়া : কুলাউড়ায় পানি কমছে ধীর গতিতে বানভাসীদের চরম দুর্ভোগ। সম্প্রতি ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুলাউড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যায়। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বন্যার পানি জমে থাকায় লোকজন চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি এগিয়ে আসে।
সমিতির অর্থায়নে ড্রামের ওপর টিন দিয়ে প্রায় ৩শ ফুটের একটি সেতু নির্মাণ করায় লোকজন সহজেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া করতে পারছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুলাউড়া পৌরসভার কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও হাঁটুর নিচে পানি মাড়িয়ে মানুষজন চলাচল করছেন।
ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। তবে ছোট যানবাহন খুবই কম চলাচল করছে। যেগুলো চলছে সেগুলোতে পানি ঢুকে বিকলও হচ্ছে। এতে চালক ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কিছুস্থানে পানি নেমে যাওয়ায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখনো বন্যার্তরা রয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
শেরপুর* : শেরপুর এলাকায় পুরান সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় লোকজন ভাঙ্গন এলাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার ভবানীপুর, মজলিসপুর, উজিরপুর, রুদ্রপুর এলাকায় পানি বাড়ছে।