আজিজুর রহমান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন প্রতিথযশা চলচ্চিত্র পরিচালক, পুরোধা ব্যক্তিত্ব। অনেকের ভাষায় একজন আজিজুর রহমান-একটি প্রতিষ্ঠান, চলচ্চিত্র সম্পর্কে বিষদ জানার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। গত মার্চ মাসে তিনি ৮২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ১৯৫৭ সালে একটি পত্রিকায় এহতেশামের ঘোষণা দেখলেন যে, তিনি একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। একদিন এহতেশামের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন তিনি। তারপর এহতেশামের সিনেমায় শিল্প নির্দেশক হিসেবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করার কথা বললে এহতেশাম তাকে তৃতীয় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার কথা বলেন।
‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে এহতেশামের তৃতীয় সহকারী হিসেবে আজিজুর রহমানের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। এহতেশামের পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘রাজধানীর বুকে’ প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে আজিজুর রহমান প্রথম ‘সাইফুল মুলক বদিউজ্জামান’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘মধুমালা’, ‘সমাধান’, ‘স্বীকৃতি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘মাটির ঘর’, ‘রূপবান’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘আলী বাবা ৪০ চোর’, ‘ডাক্তার বাড়ি'সহ ৫৩টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। আজিজুর রহমানের পরিচালনায় নাঈম-শাবনাজ অভিনয় করেছিলেন ‘দিল’, ‘জিদ’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ সিনেমায়।
একজন আজিজুর রহমানের চলে যাওয়ায় নাঈম-শাবনাজও ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন। নাঈম-শাবনাজ বলেন, ‘ আমরা দুজন যখন শ্রদ্ধেয় এহতেশামের চাঁদনী সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য কাজ শুরু করি, তখন সহকারী পরিচালক হিসেবে আজিজ ভাইকে আমরা পেয়েছি। পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবেই তার নির্দেশনায় কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি অন্য অনেক পরিচালকের চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিলেন। কারণ তিনি খুব কম মেকআপে একদম ন্যাচারাল অ্যাক্টিংটা পছন্দ করতেন বেশি।
আজিজ ভাই আমাদের দুজনকে ভীষণ স্নেহ করতেন, আমাদেরও পরম শ্রদ্ধার মানুষ ছিলেন তিনি। তার মতো এত গুণী পরিচালক, মেধাবী পরিচালক যুগে যুগে জন্মায় না। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
পরবর্তীতে শাবনাজ আজিজুর রহমানের সর্বশেষ সিনেমা ‘ডাক্তার বাড়ি'তেও অভিনয় করেছিলেন। এতে শাবনাজ শাকিব খানের ভাবির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমাটিও দর্শকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘ছুটির ঘণ্টা’। একজন স্কুল ছাত্রের করুণ মৃত্যুর ইতিহাস নিয়ে চিত্রায়িত এটি। আজিজুর রহমান একটি বাস্তব ঘটনা সিনেম্যাটিকভাবে সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দি করেছিলেন। ‘ছুটির ঘণ্টা’ সেই সময় ব্যবসা করেছিল দুই কোটি টাকা। পরিচালক হিসেবে আজিজুর রহমান পেয়েছিলেন বিশ হাজার টাকা।