মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ইংরেজী, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বাংলা ENG

আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস: শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন দিলেন ১৬১ বাংলাদেশি

সিলেটসান ডেস্ক::

২০২২-০৫-২৮ ১৮:১৬:৪৮ /

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবা দিয়ে বিশ্বের ৪৩টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। আর শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৬১ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। এর মধ্যে ১২৬ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, নৌবাহিনীর চার জন, বিমান বাহিনীর ৯ জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ২২ জন সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ২৫২ জন বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী আহত রয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর ২৪০ জন এবং পুলিশের ১২ জন সদস্য। তার পরও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের সঙ্গে মিশে গেছেন। বর্তমানে ৯টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। সব দেশের জনগণ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক প্রশংসা করেন। তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের। পেশাদায়িত্ব, আর্তমানবতার সেবা, চিকিত্সা সেবা, শিশুদের লেখাপড়া করতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিরক্ষীরা জনগণের নিকটাত্মীয়ের মতো জায়গা করে নিয়েছেন। এ কারণে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ৪৩টি দেশের মধ্যে অনেক দেশেই সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক এই সুযোগ আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। বাংলাদেশের ওষুধ, গার্মেন্টসহ সকল পণ্য চায় তারা। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই সপ্তাহের এক সফরে দক্ষিণ সুদানে যান। সেখানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের কার্যক্রম সরেজমিনে দেখে আসেন। সে দেশের সরকার, জনগণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা যেন আমাদের কাছে শান্তির দূত হয়ে এসেছেন—এমন কথাও বলেছেন। খাবার, পানি, ওষুধসহ নিত্যপণ্যের মারাত্মক সংকট সেখানে। পানিসংকটের কারণে ছয় মাস গোসলও করেনি অনেকে। সেখানে খাবার পানিসহ সবকিছু দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নিরাপত্তার পাশাপাশি সব সেবা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নেও সফলভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা করে দিয়েছে। দক্ষিণ সুদানে বৈরী আবহাওয়া, পোকা-মাকড়, সাপ ও মশার উত্পাত রয়েছে। শান্তিরক্ষী বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার পরও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশটির উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মানবতার সেবায় নজির স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশ নাম শুনলেই দক্ষিণ সুদানবাসীর মুখ থেকে ‘গুড’ শব্দটি উচ্চারিত হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা মিশনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী দুই বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে মরণোত্তর ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এ পুরস্কার হস্তান্তর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, মেজর এ কে এম মাহমুদুল হাসান ও ল্যান্স করপোরাল মো. রবিউল মোল্লা। এবারের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোত্সর্গকারী ৪২টি দেশের ১১৭ জন শান্তিরক্ষীকে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড’ মেডেল প্রদান করা হয়। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বাংলাদেশসহ ৪২টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধির হাতে স্ব স্ব দেশের মেডেল তুলে দেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস’ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে শান্তি ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের পাশাপাশি শান্তিরক্ষা মিশনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ যাতে আরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেন, এ জন্য সরকারের সব প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। তিনি শান্তিরক্ষী সদস্যগণ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের দক্ষতা পেশাদারিত্ব সাহস ও নিষ্ঠা দ্বারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। কর্মসূচি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সামরিক উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশ মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া আজ সকালে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২২’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী প্রধান অতিথি থাকবেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টক-শো সম্প্রচারিত হবে। শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে ইতিমধ্যে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

এ জাতীয় আরো খবর

 আজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আজ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

 বর্ণমালার মিছিলের মধ্য দিয়ে সিলেটে ভাষার মাস বরণ

বর্ণমালার মিছিলের মধ্য দিয়ে সিলেটে ভাষার মাস বরণ

শুভ বড়দিন আজ

শুভ বড়দিন আজ

স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক দিন আজ

স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা প্রাপ্তির ঐতিহাসিক দিন আজ

 আজ ১৫ ডিসেম্বর ‘সিলেট মুক্ত দিবস’

আজ ১৫ ডিসেম্বর ‘সিলেট মুক্ত দিবস’

শেখ রাসেল: জানার আছে অনেক কিছু

শেখ রাসেল: জানার আছে অনেক কিছু