বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইংরেজী, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা ENG

কমছে পানি-বাড়ছে দূর্ভোগ : দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের লক্ষণ

সুজিত দাশ::

২০২২-০৫-২৩ ১১:৫০:১১ /

নগরীর খুলিয়াপাড়া এলাকার ছবি।

টানা বর্ষন ও বন্যার ভোগান্তির পর পানি কমতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে ভাসতে শুরু করেছে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বন্যা দুর্গত এলাকা।

কিন্তু পানি কমলেও দূর্ভোগ কমছেনা বন্যা প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের। চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

সিলেট নগর এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় একই চিত্র চোখে পড়ে। কোথাও ঘরের ভেতর কাদা, কোথাও আবার পঁচা পানির দুর্গন্ধ। কারোর বাড়ির রাস্তায় পানি, কারোর আবার খাবার পানির সঙ্কট।

সব মিলিয়ে দুর্ভোগ যেনো পিছু ছাড়ছেনা সাধারণ মানুষের। নগরের শেখঘাট, খুলিয়াটুলা, তলতলা, মেন্দিবাগ ও উপশহরএলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক বাড়ি থেকে এখনও পানি নামেনি।

ড্রেন ও ছড়ার পঁচা পানি এসে আশপাশের এলাকা কালো হয়ে আছে। বাতাসের সাথে নাকে ভেসে আসে পঁচা পানির দুর্গন্ধ। সঙ্কটময় এই সময়ে খাবার গলা দিয়ে নামছে না ভুক্তভোগীদের।

খুলিয়াটুলা এলাকার স্থানী বাসিন্দা গুলজার মিয়া বলেন, এই এলাকাটি তুলনামূলক নিচু। আশেপাশে ৪-৫টি বস্তি রয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই এখানে সমাজের নিন্মবিত্ত মানুষ বসবাস করেন। কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি জমে আছে এলাকাজুড়ে। আস্তে আস্তে পানি কমলেও অনেক বাড়ি থেকে এখনও পানি নামেনি।

এই পঁচা পানিতে নামলে হাত-পা চুলকাচ্ছে, না নামলে আমরাও বাইরে আসতে পারতেছিনা। একই অবস্থা দেখা যায় সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাতেও।

আলীনগর উত্তর ও দক্ষিণ, নয়াগাঁও, কালিরগাঁও, বাবদাখান্দি, পানিরগাঁওসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি আছে।

 

যেসকল এলাকার পানি নেমেছে সেসব এলাকায় খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয়রা। এখনও চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারছেন না অনেকে।

সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্যপণ্যের, নিরাপদ পানির অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন জানান, আমার ঘরে পানি উঠেছিল।

এখন পানি কিছুটা নেমেছে কিন্তু ঘরের বেড়ার যতটুকু অংশ পানির নিচে ছিল ততখানি কখন যে ভেঙ্গে পড়ে সেই চিন্তায় আছি।

ঘরের মেঝেতে কাদা। বাথরুম ও শৌচালয়ে এখনও পানি আছে। পানি পুরোপুরি না নামা পর্যন্ত আমাদের কষ্ট শেষ হবেনা।

সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি আগের থেকে অনেকটাই কমে গেছে।

তবে পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি।

অন্যদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের। পানি কমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই পানি কমার সাথে সাথে বানভাসি এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করেন। জানা গেছে, বন্যায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর,

সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড,

ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল।

সোমবার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর এখনো পানির নিচে।

বাসিন্দাদের ঘরের সামনে এখনো হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এ পানি কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের শঙ্কায় আছেন।

 

এ ছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে ঘর ও আশপাশে জড়ো হয়েছে। জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

নগরে্রী বন্যা কবলিত এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন।

আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। এদিকে, বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষ্মণ দেখা দিয়েছে।

যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ শহরের বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিলেট সিভিল সার্জন ও সিলেট সিটি করপোরেশন। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, ‘বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগ বেড়েছে।

৩৭৬ জন লোক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ৬ জন চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পরে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট সদরে ১০টি,

 

দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি,

জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে ৭টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এর বাইরে জেলা সদরে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে কথা বললে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রাজীব দাস জানান, "ইউনিয়নের প্রায় পুরো এলাকা পানির নিচে ছিল।

 

এখন পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সাথে সাথে মানুষের কষ্ট বাড়ছে এটা আমরা খেয়াল করেছি। বন্যার শুরুর থেকে আমরা সবার জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি যা এখনও অব্যাহত আছে।

 

যাদের মাটির ঘর আছে তারা রান্নাবান্নায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রান্না ঘরের মাটি না শুকানো পর্যন্ত তাদের এই কষ্ট সহ্য করতে হবে। তারপরও আমাদের থেকে যা যা করার আমি করে যাবো।

এ জাতীয় আরো খবর

সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল সম্পাদক সিরাজ

সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল সম্পাদক সিরাজ

কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসান আর নেই,  সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেল একটি কন্ঠ

কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসান আর নেই, সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেল একটি কন্ঠ

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

 উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ  কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির  নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন