শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইংরেজী, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বাংলা ENG

ধীরে নামছে পানি, দূর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট

নাছরু আহমদ চৌধুরী::

২০২২-০৫-২২ ২০:৪১:১১ /

ছবিটি তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রি মো. সোহেল আহমদ।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। বিভাগের বন্যা প্লাবিত প্রায় সব এলাকা থেকেই কমতে শুরু করেছে পানি।

এদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়। নগরীতে সিসিক কাউন্সিলরদের মাধ্যমে পানি দেওয়া হলেও উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে এখনো রয়েছে ব্যক্তি পর্যায়ে।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। তবে রোববারও ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত বাড়তে থাকা সুনামগঞ্জে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি।

 

রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত একদিনে পানি কমেছে ৩০ সেন্টিমিটার। ফলে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুনামগঞ্জের পানি। এদিকে সুরমা ও কুশিয়ারায় পানি কমেছে। গত ২৪ ঘন্টায় সুরমায় ৯ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারায় ৩৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমেছে। কিছু এলাকার বাসা-বাড়ী থেকে নামলেও রাস্তাঘাটে পানি রয়েছে। কিছু এলাকার এখনো বাসা-বাড়ীতে পানি রয়ে গেছে।

 

নগরীর যেসব এলাকা থেকে পানি নেমেছে সেসব এলাকায় নতুন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। পানি নেমে গেলেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লা আবর্জনা পড়ে রয়েছে রাস্তায়। দুর্গন্ধের কারণে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

 

জীবন জীবিকার তাগিদে ময়লা পানি মাড়িয়ে অনেকে বাসা বাড়ী থেকে বের হচ্ছেন। নোংরা পানিতে পানিবাহিত সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

 

বিশেষ করে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের এসব পানি থেকে দূরে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। এ ব্যাপার সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় শংকর দত্ত বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়।

এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত- প্রথমত কষ্ট করে হলেও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে অথবা ফুটিয়ে পানি পান করতে হবে।

 দ্বীতিয়ত, ময়লা ও নোংরা পানি মাড়িয়ে গেলে দ্রুত সাবান দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ময়লা পানি থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে।

 

তিনি বলেন, পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য আমরা ইতোমধ্যে ১৪০ টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে। সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে আমরা পানিবাহিত রোগবালাই থেকে নিজে ও পরিবার পরিজনকে রক্ষা করতে পারি।

 

এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর প্লাবিত এলাকার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক মেরামত, পুনঃনির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসা-বাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

মহানগরের বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের সকল দপ্তর-সংস্থা ও অংশিজনদের নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

 

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন এমপি বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রাকৃতিক এই দুযোর্গ পরবর্তি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাড়ি ঘরের তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

বিশেষ করে সুরমা নদী খনন, মহানগরের পুকুর-দীঘি উদ্ধার ও খনন এবং ছড়াগুলোকে শতভাগ উদ্ধার করার নির্দেশনা দেন তিনি। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মহানগর রক্ষায় স্বল্প, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর জোর দেন তিনি।

 

জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ শেষে রোববার থেকে কমছে পানি। প্লাবিত অনেক অঞ্চল থেকেই পানি নেমে গেছে। সিলেট নগরীর সিংহভাগ এলাকাই এখন পানিবন্দি পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার বিকেল ৩টায় ছিল ১৩.৫৮ মিটার, আর রোববার বিকেলে ছিল ১৩.৪৪ মিটার। এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শনিবার বিকাল ৩টায় ছিল ১০.৯৭ মিটার, আর রোববার বিকেলে ১০.৮৫ মিটার।

 

সুরমার এই দুই পয়েন্টে পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার উপরে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর আমলশিদ পয়েন্টে শনিবার বিকেল ৩টায় পানিসীমা ছিল ১৬.৯১ মিটার, রোববার বিকেলে ১৬.৫৬ মিটার। এ নদীর পানি কমেছে শেওলা পয়েন্টেও।

 

এখানে শনিবার বিকেল ৩টায় ছিল ১৩.৫৯ মিটার, রোববার বিকেলে ১৩.৫০ মিটার। এখনো এ নদীর দুই পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে রয়েছে।

তবে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বেড়েছে। শেরপুরে শনিবার বিকেলে ছিল ৭.৯৪ মিটার, রোববার বিকেলে সেখানের পানিসীমা ৮.০০ মিটার।

ফেঞ্চুগঞ্জে শনিবার বিকেলে ছিল ৯.৮৩ মিটার আর রোববার বিকেলে ৯.৯৪ মিটার। লোভা নদীর পানি শনিবার বিকেলে ছিল ১৩.৮৬ মিটার, আর রোববার তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৬৯ মিটারে।

সারি নদীর পানি শনিবারে বিকেলে ছিল ১০.৯১ মিটার আর রোববার বিকেলে সেখানের পানিসীমা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৬৫ মিটারে। এ ছাড়া ধলাই নদীর পানিও কমেছে।

 

এ নদীর পানিসীমা শনিবার বিকেলে ছিল ১০.৬৬ মিটার, রোববার বিকেলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৩৯ পয়েন্টে।

সিলেট বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস. এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটের প্রায় সব এলাকাতেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

কিছু জায়গায় দ্রুত নামলেও কিছু জায়গায় পানি কমছে ধীরগতিতে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।

এদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়। স্থানীয় লোকজন বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েছেন। নগরীর মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিটি করপোরেশনের পানি বিশুদ্ধকরণ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) প্লান্টও তলিয়ে গেছে।

পাশাপাশি আরো চারটি পাম্পও তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে এসব এলাকার জনগণও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না।

সিলেটের অন্তত ২০টি উপজেলার শতাধিক গ্রাম বন্যায় কবলিত। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহের একমাত্র ভরসা টিউবওয়েলও পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী লোকজন দূরদূরান্ত থেকে কলসি, হাড়ি-পাতিলে করে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। শহর এলাকায় খাবার সমস্যা না থাকলেও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

নগরীর বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন বলছেন, কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। তার ওপর নেই পানি।

খাবার বা টয়লেটের জন্য তারা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না। নিম্ম আয়ের মানুষজন বৃষ্টির পানি ছেঁকে পানের জন্য ধরে রাখছেন। সিলেট নগরীর মাছিমপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক মিয়ার বাসার টিউবওয়েল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি জমিয়েছেন।

ভোগান্তিতে পড়েছে নগরীর শাহজালাল উপশহর, শেখঘাট, কলাপাড়া, সোনারপাড়া, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপার, চালিবন্দর কানিশাইল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ উপশহর এলাকার বাসিন্দা সালেক মোর্শেদ বলেন, মঙ্গলবার থেকে আমরা পানিবন্দি। বিশুদ্ধ পানির অভাব।

ময়লা পানি মাড়িয়ে পানের জন্য বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয়। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখনো অনেক ব্লকে কোমর সমান পানি, ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

 

পানির মটর তলিয়ে গেছে, তাই পানি তুলতে পারছেন না। কিছু কিছু জায়গায় মটর ঠিক থাকলেও ট্যাংকি ময়লায় নষ্ট হওয়ায় পানি তোলা যাচ্ছে না।

 

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ময়লা পানি ঢুকায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না। এছাড়া পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে থাকায় চারটি পাম্প বন্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় দুই হাজার লিটারের ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ জাতীয় আরো খবর

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মোঘলাবাজারে চেক প্রতারনা মামলায় লন্ডন প্রবাসী মনসুরুল কারাগারে

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

 উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

উপজেলা নির্বাচন ২০২৪: সিলেট বিভাগের ১১ টিতে নির্বাচন ৮ মে

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ  কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির  নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির অনুমোদন

সিলেটের ১৯ আসন: ১৫টিতে নৌকা, ৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী

সিলেটের ১৯ আসন: ১৫টিতে নৌকা, ৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী

 চলছে ভোটগ্রহন, বাড়ছে ভোটার উপস্থিতি

চলছে ভোটগ্রহন, বাড়ছে ভোটার উপস্থিতি