২০২১-১২-১৮ ০২:০৪:০৮ / Print
মহান বিজয় দিবস ও সপ্তাহের সরকারি ছুটিতে ভ্রমণের জোয়ারে ভাসছে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। গত বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের দিন ও শুক্রবার কয়েক লাখ পর্যটক সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে এসেছেন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকায় সবচেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে জল পাথরের বিছানা খ্যাত “বিছনাকান্দি” ও জলার বন “রাতারগুলেও” ছিল পর্যটকদের উপচে পরা ভিড়। যেনো লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে পাথুরে জনপদের এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
শুক্রবার পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নানা বয়সের পর্যটকরা সকাল থেকেই ভিড় করেছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাফলংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। ঠাঁই ছিলো না হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট গুলোতেও। জাফলংয়ের জিরোপয়েন্ট, খাসিয়াপল্লী ও চা-বাগানে গিয়ে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করছেন। এদিকে শুষ্ক মৌসুম হওয়ার কারণে জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনায় জল না থাকলেও সেখানে গিয়েও অনেক পর্যটক ঢু মেরে আসছেন। দুপুরের দিকে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগমে কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেন এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যেন ভ্রমণের উল্লাসে মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ বল্লাঘাট থেকে ছুটে যাচ্ছেন জিরো পয়েন্টে, সমতল ভূমির চা-বাগান এলাকায় এবং খাসিয়া পল্লীতে।
নরসিংদী থেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবি ওয়াসির আলী। তিনি জানান, টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। অনেকদিন ধরে কাজের চাপে কোথাও যাওয়া হয়না। তাই সুযোগ পেয়েই জাফলং চলে এসেছেন। খুব সুন্দর যায়গা, চারপাশের পরিবেশ আমাদেরকে অনেক মুগ্ধ করেছে।
পর্যটন এলাকার কসমেটিক্স ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির বলেন, দুইদিন ধরে প্রচুর পরিমাণ পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। আমাদেরও বেচাকেনা ভালো হয়েছে। আশা করছি আজ শনিবারও এমনই পর্যটক আসবেন।
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, করোনার কারণে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পর থেকে কিছু কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। দুইদিন ধরে যে পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হচ্ছে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বিগত দিনের লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
জাফলং গ্রীণ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবলু বখত বলেন, টানা ছুটিতে জাফলংয়ে প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। গত কয়েকদিন ধরে আমাদের রিসোর্টসহ স্থানীয় আবাসিক হোটেল-মোটেল গুলোর শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। পর্যটকের এমন সমাগম থাকলে আশা করি সামনের দিনগুলোতেও ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধি হবে।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মো. রতন শেখ জানান, গত দুই ধরে এখানে কয়েক লাখ লোক বেড়াতে এসেছেন। তাদের নিরাপত্তা দিতে আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা মাঠে রয়েছি। আগত পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, বছরের দুই ঈদ, বাংলা নববর্ষ বা বিশেষ কোন উৎসবের দিনে গোয়াইনঘাটের পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে আসেন। কিন্তু, করোনার পর থেকে দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের মতো এখানকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক কমে যায়। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবারের বিজয় দিবসে তিনটি স্পট মিলিয়ে প্রায় কয়েক লাখ পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। আগত পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন সে লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল পর্যটকের টোল ফ্রি করে দেয়া হয়েছে।
সিলেট সান/এসএ