শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইংরেজী, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বাংলা ENG

জুড়ীতে কমলা চাষীদের ভাগ্য বদল

এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী থেকে :

২০২১-১১-১৮ ০৭:৪০:০৬ /

 

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাগানগুলোতে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সু-স্বাদু কমলা। পাহাড়ি জনপদের কমলা চাষিদের মুখে বইছে আনন্দের হাসি। আর এ কমলা বদলে দিয়েছে অত্রাঞ্চলের চাষিদের জীবন। কমলা পাকতে শুরু করায় ইতোমধ্যে বেচা-কেনা শুরু হয়ে গেছে। কমলা ফলনের পাশাপাশি বাজার দর সন্তোষজনক হওয়ায় চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গাছ থেকে পাকা, আধা পাকা কমলা সংগ্রহ ও খাঁচাবন্দি করে পাইকারদের হাতে তুলে দিয়ে টাকা গুনতে গুনতে প্রশান্তির হাসি মুখে ঘরে ফিরছেন চাষিরা। এ অঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বেশী কমলা বিক্রি হবে হলে আশা করছেন চাষিরা। গত বছরের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় দ্বিগুন বেশী কমলার ফলন ও বিক্রি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন চাষি ও সংশ্লিষ্টরা। অধিক মুনাফা লাভের আশায় ক্রেতা ও চাষিরা পাকা ও আধাপাকা কমলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, ভৈরব ও সিলেটে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকযোগে নিয়ে বিক্রি করছেন।

উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনাল ইউনিয়নের পুটিছড়া, পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের কালাছড়া ও টালিয়াউড়া এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্যান্য গ্রামের টিলা বাড়িগুলোতে কমলার পাশাপাশি বাতাবি লেবু, আদা লেবু, শাসনি ও জাড়ালেবুর বাগান রয়েছে। এছাড়াও অত্রাঞ্চলের মাটিগুলো মাল্টা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, কৃষকরা গত ২/৩ বছর যাবত তা আবাদে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।

আর এ বাগানগুলোতে পেশা হিসেবে সর্বদা পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এক একটি বাগান থেকে প্রায় ৩/৪ লাখ টাকার ফলন পাওয়া যায়। কমলা চাষে যেমন খরচ কম, তেমন শ্রমও দিতে হয়না এমনটাই জানিয়েছেন অত্র বাগানগুলোর কৃষকরা। ফলে, কমলা ও মাল্টা চাষে অত্রাঞ্চলের কৃষকরা আগ্রহী হওয়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।

জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯১ হেক্টর জমিতে ৮৫ টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে ২ জাতের কমলার চাষাবাদ হচ্ছে। এক জাতের নাম খাসি ও অপর জাতের নাম নাগপুড়ি।

অত্রাঞ্চলের অধিকাংশ কমলা খাসি জাতের চাষাবাদ হচ্ছে। এ বাগানগুলো থেকে চলতি মৌসুমে ৫৫০ মেট্রিকটন কমলা লেবুর ফলন প্রাপ্তির আশা রয়েছে। সরেজমিনে আলাপ হয়, গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি জায়নুল ইসলাম (৩৫) এর সাথে। আলাপকালে তিনি বলেন, কমলা এক বছর অন্য বছরের তুলনায় একটু কম হয়েছে।

এ বছর সময় মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবারের ফলন এক রকমই হয়েছে। তিনি বলেন, এবারে কমলার বাজার মূল্য গত বছরের তুলনায় বেশি, আকারেও মোটামুটি বড়। তিনি ৩ একর জমিতে কমলা চাষ করেছেন। শুরুতে ৯শ থেকে শুরু করে বর্তমানে ১২শ টাকা কমলা শ বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যে ১ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। আরো ২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন।

এছাড়াও একই গ্রামের কমলা চাষি শামীম আহমদ (৩০), জয়নুল মিয়া (২৯), হায়াছড়া গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৫), কচুরগুল গ্রামের হাজী নজির আহমদ (৪৫) ও শুকনাছড়া গ্রামের জাহাঙ্গির (২৭) সহ অনেকে জানান, প্রতি বছর ভারতীয় কমলা বাংলাদেশে আসায় আমাদের কমলা বিক্রি করতে সমস্যা হয়। তা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, অত্রাঞ্চলের কমলা চাষিরা আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কমলা বাগানের পরিচর্যা করেছেন।

পোকা মাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করায় এবং কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করায় এ বছর জুড়ী উপজেলায় গত বছরের ন্যায় ফলন কম হয়েছে। কারণ, সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া।

তিন আরো জানান, অত্রাঞ্চলে কমলা চাষিদের কমলার পাশা-পাশি মাল্টা আবাদে আগ্রহ দেখে মাটির গুনাগুন যাচাই করে বিগত ২/৩ বছরে ৭০ জন চাষির মাঝে ৭০টি মাল্টার চারা বিতরণ এবং দার্জিলিং থেকে আমদানিকৃত সু-মিষ্ট ও সুস্বাদু কমলার কলম পরীক্ষামূলকভাবে রোপন করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন চাষিদের মাঝে বিতরণ করেছি। দেখা গেছে, কমলার ন্যায় অত্রাঞ্চল মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

নতুন করে এ বছর উপজেলার বিভিন্ন বাগানে মাল্টার অভাবনীয় ফলন হয়েছে। ভারতীয় কমলা যাতে আমাদের বাজারে আসতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।


 

সিলেট সান/এসএ

এ জাতীয় আরো খবর

চলমান বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

চলমান বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানে

বৃষ্টির দেখা নেই, চা শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বৃষ্টির দেখা নেই, চা শিল্পে বিপর্যয়ের শঙ্কা

বন্যায় সবজি উৎপাদনে শঙ্কা,  ১ লাখ হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

বন্যায় সবজি উৎপাদনে শঙ্কা, ১ লাখ হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদকৃষি প্রযুক্তি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদকৃষি প্রযুক্তি

বন্যায় সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় পৌনে ২ লাখ একর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় পৌনে ২ লাখ একর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত

কান্দিগাওয়ে বারি হাইব্রিড বেগুন-৪ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

কান্দিগাওয়ে বারি হাইব্রিড বেগুন-৪ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত