২০২১-০৯-০৭ ১৫:২৪:৪৫ / Print
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে খাসি-গারো পুঞ্জির লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বেলা সাড়ে ১১টায় কাঁঠালতলী বাজারে অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কমিউনিটি সেন্টারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান।
এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায়, কর্মধা ইউপির চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক, পৃথিমপাশা ইউপির চেয়ারম্যান নওয়াব আলী বাকর খান, বন বিভাগের কুলাউড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন, স্থানীয় খাসিয়া-গারোদের কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং, বন বিভাগের উপকারভোগী হারিছ আলী প্রমুখ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কর্মধা ইউনিয়নে দুর্গম বিভিন্ন টিলা এলাকায় ২৫টি পুঞ্জি (গ্রাম) রয়েছে। এসব পুঞ্জিতে ১০ সহস্রাধিক খাসিয়া ও গারো লোকজন থাকে। পান চাষ ও তা বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। সেখানে ১৪৫ একর জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় ডলুছড়া পুঞ্জির খাসিয়া লোকজনের সঙ্গে বন বিভাগের মামলা-মোকাদ্দমা চলছে। সম্প্রতি বন বিভাগের মুরইছড়া বিটের উদ্যোগে বিরোধপূর্ণ জমির পাশে ২৫ একর জায়গায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বাগান করা হয়। এ নিয়ে বন বিভাগ ও সামাজিক বনায়নের স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে পুঞ্জির বাসিন্দাদের সংঘর্ষ, হামলা, মামলা এবং গাছ ও পানগাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটছে।
এমন পরিস্থিতিতে এই সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন।
সম্প্রীতি সমাবেশে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সবাইকে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন, বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। যাঁদের ভূমির দলিল নেই, তাঁদের থাকার অধিকার আছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তাঁদের অধিকার, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন করা যাবে না।
এ অঞ্চলে পান পুঞ্জিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, রাষ্ট্রের নানা সুবিধা ভোগ করে রাষ্ট্রকে কী দিচ্ছি, সেটাও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সমাজের কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বনের ভেতর সামাজিক বনায়ন হতে পারে না। কিন্তু, যেখানে খালি জায়গা আছে, সেখানে সামাজিক বনায়ন হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন- এ অঞ্চলের ১০ হাজার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারাটা সবার জন্য লজ্জার। পরিবারে কোনো বিরোধ ঘটলে সেটারও মীমাংসা হয়। খাসিয়া লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর খাসিয়া লোকজনও বন বিভাগের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না।
এসময় জেলা প্রশাসক বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউএনওকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন।
সিলেট সান/এসএ