২০২১-০৭-০৩ ১০:৫১:৩৯ / Print
করোনার প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট বর্তমান সংকট সবাই থেকে বেশি ক্ষতি করে চলেছে শিক্ষাব্যবস্হার। শিক্ষার এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে লেগে যাবে দীর্ঘদিন তাতে জাতির উন্নতি হবে বহুলাংশে ব্যাহত ও ক্ষীণ গতিসম্পন্ন। মাত্র বছর দেড়েক পূর্বেও আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল ব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল। প্রতিদিনের সকাল শুরু হতো ব্যস্ততা দিয়ে। এমন জীবনে অভ্যস্ত আমরা তখন পর্যন্ত ভাবতেও পারিনি সামনের দিনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরো দুনিয়া জুড়ে যে স্থবিরতা নেমে এসেছে তা থেকে রেহাই পায়নি শিক্ষাব্যবস্হা তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল কারিগর শিক্ষকবৃন্দ। সমস্ত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লকডাউন অবস্হায় শিক্ষকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তা অনুভব করতে পেরেছি বিগত সময়ে বিভিন্ন তারিখে খোঁজ খবর নিতে শিক্ষকদের সাথে টেলিফোনিক আলাপ ও সভার মাধ্যমে।
এবার প্রথমে বলি লকডাউন কি? লকডাউন শব্দের শাব্দিক অর্থ তালাবদ্ধ করে দেয়া। ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে বলা হয়েছে কোনো জরুরি পরিস্হিতির কারণে সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গা থেকে বের হতে না দেওয়া কিংবা ঐ জায়গায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়াই হলো লকডাউন।এ ছাড়া অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে বলা হয়েছে, জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্হান নিয়ন্ত্রণ করাই লকডাউন। তবে লকডাউন শব্দের সরল বাংলা "অবরুদ্ধ "বা " প্রিজনে রাখা"। আমার পর্যবেক্ষণে লকডাউনের ফলে শিক্ষকদের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিম্নে তা তুলে ধরা
হলো।
#####
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে শিক্ষকদের মধ্যে প্রানচান্চল্য থাকে। পাঠদানকালে শিক্ষকদের অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পাঠপরিকল্পনা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থাপন করতে হয়ে এতে শিক্ষকদের পেশার দক্ষতা বৃদ্ধি পায় কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এধরণের কাজ সম্ভব হচ্ছে না বিধায় দক্ষতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সারাদিন ঘরে বসে থাকার কারণে অলস হয়ে শারীরিকভাবে স্হূলকায় হয়ে পড়ছেন। বয়স্ক শিক্ষকরা হাঁটাচলা না করতে পারায় বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়বেটিস,প্রেসার, কিডনী সমস্যা কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মানসিক চাপে ভুগছেন।
অনেক শিক্ষক বিশেষ করে নন এমপিওভূক্ত শিক্ষকবৃন্দ স্কুল শেষে অবসর সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম করে কিছু বাড়তি আয় করে তাদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করতেন। লকডাউনের পর এ ধরনের শিক্ষকবৃন্দ বাইরে অথবা ভিতরে বসে কোনভাবেই অতিরিক্ত আয় করতে না পারায় আর্থিক অস্বচ্ছতায় ভুগছে। ফলে তারা তাদের পরিবারের দৈনন্দিন খরচ মিটাতে হিমসিম খাচ্ছে। অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক একটি স্বর্গীয় ব্যাপার। স্কুল খোলাকালে তাদের মধ্যে এ সম্পর্কের উন্নতি ঘটতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বেশ কিছুটা বিচ্যুতি ঘটছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
লকডাউনের পূর্বে শিক্ষকবৃন্দ বা তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ প্রয়োজনের তাগিদে বাইরে থাকতেন অথবা যেতেন ফলে খাওয়া দাওয়া চলাফেরা একটি নিয়মমাফিক চলতো কিন্তু এখন ঘরে থাকার কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াইফাই, বিল বেশি হচ্ছে এমনকি আগের তুলনায় বিভিন্ন রকমারি খাবারের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে মাসিক খরচ বেড়ে গিয়েছে। যা আয় অনুসারে ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোন কোন পরিবারে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
এখন আসি এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য কি করণীয় আমাদের। আমার অনুরোধ এ-ই সময়ে প্রত্যেকের বিষয়গুলো ভাল করে পড়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে এবং যারা ডিজিটাল ক্লাসে অপারগ অথবা আগ্রহ কম তাদেরকে অন্য সহকর্মীরা সহযোগিতা করবেন।
বর্তমান সময়ের জন্য এসাইনমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিকট এর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। কিশোর বাতায়নের সদস্য হবেন।সর্বোপরি অপচয় বন্ধ করে মিতব্যয়ী হতে হবে।
মো. কবির খান
প্রধান শিক্ষক
সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
সিলেট সান/এসএ